তারকেশ্বর TV: জার্মানির বাল্টিক উপসাগরে সম্প্রতি একটি দীর্ঘ পাথরের প্রাচীরের খোঁজ মিলল। এটি প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে এই প্রাচীরটি প্রস্তর যুগের, এটি ইউরোপের প্রাচীনতম মানব-নির্মিত কাঠামো।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, একদল শিক্ষার্থী মেকলেনবার্গ উপসাগর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে একটি স্থানে শিক্ষামূলক ভ্রমণ শুরু করে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। তখনই এক দল বিজ্ঞানী সমুদ্রের নীচে কিছু জিনিস পর্যবেক্ষণের সময় ওই প্রাচীরের হদিস পান। প্রাচীরটিতে ১,৬৭৩টি পাথর রয়েছে, যার উচ্চতা এক মিটারের কম এবং দৈর্ঘ্য ৯৭১ মিটার। প্রাচীরটিতে প্রায় ৩০০ টি বিশাল বোল্ডার ছিল, এতে হাজার হাজার ছোট ছোট পাথর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রাচীর নির্মাণে ব্যবহৃত বিশাল পাথরগুলি তাদের আকার এবং ওজনের কারণে বিজ্ঞানীদের অবাক করেছিল। এই প্রাচীর নির্মাণের সময় সেখানে কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না। যন্ত্রপাতি ছাড়াই কীভাবে পাথরগুলো সরানো হলো তা নিয়ে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা প্রাচীরের আকৃতি এবং গঠন সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী, এবং এটি স্পষ্ট যে এটি কোনও উপায়ে প্রাকৃতিকভাবে ঘটেনি। এই প্রাচীর সুনামি বা হিমবাহ দ্বারা তৈরি হয়নি, বরং মানুষের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।
গবেষকরা দেখেছেন যে হিমবাহগুলি মাঝে মাঝে পলি সঞ্চয় করতে পারে এবং সমুদ্রগর্ভে প্রাচীর তৈরি করতে পারে। যখন সুনামি হয়, তখন ঢেউ দ্বারা বাহিত বালি এবং পলি ধুয়ে যায় এবং সমুদ্রের তলদেশে স্থির হয়, সম্ভাব্যভাবে একটি প্রাচীর তৈরি করে। যাইহোক, এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে বাল্টিক উপসাগরের প্রাচীর এই পদ্ধতিতে গঠিত হয়নি।
গবেষকদের মতে, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে একটি হ্রদের উপকণ্ঠে এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। বল্গা হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যেই এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা প্রাচীরের সাথে একত্রে ফাঁদ ব্যবহার করেছিল। মহাপ্রাচীরের কাছে অন্য একটি প্রাচীর সমুদ্রের পলির নিচে ঢাকা পরে আছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
ওই প্রাচীর টপকে বলগা হরিণ এলেই তির-ধনুক দিয়ে তাদের শিকার করা হত। অনতিদূরে আরও একটি প্রাচীর থাকায় তারা দৌড়ে পালাতে পারত না। ফলে শিকারিদের ফাঁদে পড়ত।ধারণা করা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্রায় সাড়ে আট হাজার বছর আগে প্রাচীরটি সমুদ্রের তলদেশে ডুবে গিয়েছিল।
ওই প্রাচীর পরীক্ষা করে গবেষকেরা মনে করছেন, প্রায় সাড়ে আট হাজার বছর আগে প্রাচীরটি সমুদ্রের নীচে ডুবে গিয়েছিল। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিই ছিল এর কারণ। এই প্রাচীরটি আবিষ্কারের পর গবেষকদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে অনেক কিছু। ১০ হাজার বছর আগে কী ভাবে শিকার করা হত, সেই সময়ে কতটা উন্নত ছিল মানুষের চিন্তভাবনা, তা দেখে বিস্মিত হয়েছেন তাঁরা।
গবেষকরা বর্তমানে প্রাচীরের কাছে প্রাণীর হাড়ের সন্ধান করছেন, অতিরিক্ত প্রমাণ সংগ্রহের লক্ষ্য যা তাদের যুক্তিকে শক্তিশালী করবে।
________