দুপুরের লাঞ্চ সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিল সুজয়। কলকাতা থেকে অনেকটা পথ যাবে সে। আজ সে যাবে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে এক বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুর নাম অনিকেত। অনিকেতের বোনের বিয়ে। অনেক কাছের বন্ধু সে। চাকরির পড়াশোনার সময় কোচিং ক্লাস থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। অনিকেত কলকাতাতেই চাকরি করে। সপ্তাহে দু তিনদিন দুজনের দেখা হয়ই।
অফিসের কাজের চাপে বিশেষ বেরনো হয়না সুজয়ের। হাতেগোনা আত্মীয়দের বাড়ি ছাড়া কোথাও বিশেষ যেতে সময় পায় না। সদ্য চাকরিতে জয়েন করেছে সে। বিয়ের দেখাশোনাও চলছে। স্কুল কলেজের পুরানো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ টা এখন ফেসবুক, হোয়াটস্যাপেই হয়ে গেছে।
যাই হোক বাস ধরে এসে হাওড়া থেকে পেয়ে গেল ৪:১০ এর তারকেশ্বর লোকাল। দুঘণ্টাতেই পৌঁছে গেল তারকেশ্বর। ধরে নিল জামালপুর যাবার জন্য বাস। এমন সময় কোথা থেকে কালো মেঘ এসে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হল।
হটাৎ অনিকেতের ফোন –
“তুই কোথায় আছিস”? জিজ্ঞাসা করল অনিকেত।
“আমি এই তো দশঘরায়”। উত্তর দিল সুজয়।
অনিকেত বলল। “নেমে পর ওখানেই আমি যেতে পারছি না। বিয়ের কিছু কাজের জন্য আরও একটা বাইক লাগবে। তুই মাসিমনির ছেলের সাথে বাইক টা নিয়ে আয়”। অনিকেতের মাসিমনির বাড়ি দশঘরাতেই।
মাসিমনির ছেলের মোবাইলের দোকান। সে অনিকেত দের বাড়ি যাবে তবে আজই নয়। তাই বাইকটা সুজয়কেই নিয়ে যেতে হবে।
সুজয় দোকান থেকে বাইক নিয়ে স্টার্ট দিতে যাবে আবার শুরু হল বৃষ্টি। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে গেছে। রেনকোট ছিল না তাই একটু বৃষ্টি কমতেই রওনা দিল। এদিকে সময় সন্ধ্যা ৭ টা হয়েগেছে। বৃষ্টি ভেজা রাস্তা ধরে বাইক চালাতে থাকল সুজয়।
আবার শুরু বৃষ্টি। তবুও পরোয়া না করে এগিয়ে যেতে থাকল সে। ঠিক যেমনি চকদিঘি পৌঁছেছে শুরু হল ঝোড়ো হাওয়া, মুষলধারে বৃষ্টি আর কড় কড় শব্দে আকাশের ডাক। ফোন টা বাধ্য হয়েই সুইচ অফ করতে হল। রাস্তার আলো গুলো নিভে গিয়ে অন্ধকারে যেন ভরে গেছে।
রাতের অন্ধকারে হালকা ঝাপসা আলো রাস্তার দু’পাশের পুরোনো, পোড়ামাটির বাড়িগুলোর ওপর পড়ে একটা রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করছিল। ঠিক এমন সময় হঠাৎ থমকে গেল তার পা। চোখের সামনে ভেসে উঠল একটি অতিকায়, জরাজীর্ণ ভবন। বাড়িটির দেওয়ালগুলোয় বহু বছরের জমে থাকা ধুলো, মলিন ইটের গায়ে গভীর ফাটল, আর জানালার কাঁচগুলো কোথাও ভাঙা, কোথাও বা প্রায় ঝুলে পড়েছে। মরচে ধরা লোহার দরজার হাতলটা দেখে মনে হয়, যেন যুগ যুগ ধরে কেউ একে ছুঁয়েও দেখেনি।
অনিকেতের কথা মনে পড়ল সুজয়ের, তার কাছ থেকেই শুনেছে যে এই বাড়িটি অভিশপ্ত। সেই কৌতূহল দমাতে পারল না সে। “সত্যিই কি এত ভয়ঙ্কর কিছু আছে এখানে?” মনে মনে বলল সে, আর বাইকটা রেখেই নিয়ে এই প্রাচীন ভবনটির দিকে পা বাড়াল। এমনই এক গলিতে হারিয়ে যাওয়া বাড়িটি, যা যেন সময়ের স্রোতে হারিয়ে গিয়েছে। ‘যাই হোক বৃষ্টি থেকে তো রেহাই। বেশিক্ষণ হবে না’ – মনে মনে ভাবল সুজয়।
তখনই বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ল। সুজয়ের গা ভিজতে শুরু করল, আর তাকে বাধ্য হয়ে আশ্রয়ের জন্য বাড়ির ভেতরে ঢুকতে হলো। ঘরে ঢুকেই যেন বুকের ভেতর দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
চলবে… (পর্ব ২ পর্যন্ত)
________