রাহুল, কলকাতা শহরের একজন তরুণ প্রযুক্তি-উৎসাহী। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে। প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার আগ্রহও বেশ। প্রতিদিন তার বেশিরভাগ সময় কাটে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে।
একদিন রাতে ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে একটি বিজ্ঞাপনের দিকে তার চোখ আটকে গেল। “অল্প সময়ে হাজার ডলার আয়ের সুযোগ!” এরকম কিছু লিখা, সাথে বেশ কিছু হাসিখুশি মানুষের ছবি। বিজ্ঞাপনে তারা দেখাচ্ছিল, কিভাবে সহজে অনলাইনে কাজ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। রাহুল ভাবল, কিছুটা সময় দিয়েই যদি অতিরিক্ত কিছু টাকা আয় করা যায়, ক্ষতি কী?
এক ক্লিকে বিজ্ঞাপনটি তাকে নিয়ে গেল একটি ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটটি খুবই প্রোফেসনাল এবং চমৎকারভাবে সাজানো। সেখানে ছিল বেশ কয়েকটি সফলতার গল্প। যার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছিল কীভাবে তারা অল্প সময়ে বড়লোক হয়ে গিয়েছে। এমনকি তাদের প্রোফাইলে রাহুল কিছু পরিচিত নামও দেখতে পেল। তাই সে একটা আকর্ষণ অনুভব করল। “একটু দেখি না, কীভাবে হয়!”
ওয়েবসাইটে নাম রেজিস্টার করতে বলা হলো। ইমেইল, ফোন নাম্বার এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট খুলল রাহুল। এরপর তাকে বলা হলো কিছু প্রাথমিক পেমেন্ট (Initial Payment) করতে, যা তারা বলল “প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট,” যা কেবলমাত্র একবার দিতে হবে। রাহুল প্রথমে একটু দ্বিধা করল, কিন্তু সাথে সাথে সাপোর্ট টিমের এক সদস্যের মেসেজ এলো। তিনি রাহুলকে প্রমিজ করলেন যে এই অর্থ খুব শীঘ্রই লাভের সাথে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। প্রলোভনে পড়ে রাহুল সেই পেমেন্ট করল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। দুই দিন পর, আবার তাকে মেসেজ করা হলো যে, কিছু “ক্লায়েন্ট ফি” দিতে হবে। “যেহেতু প্রথমবার পেমেন্ট করেছি, দ্বিতীয়বারেও হয়তো একটু দিলে ক্ষতি নেই,” ভেবে সে আরও কিছু টাকা পাঠাল।
এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল। রাহুল প্রতিদিনই ভাবছে, কবে তার প্রফিট আসবে। কিন্তু পরবর্তী দিনগুলোতে আরও কিছু অপ্রত্যাশিত ফি, ট্যাক্স এবং নানান অজুহাতে তাকে আরও কিছু টাকা দিতে বলা হলো। ধীরে ধীরে তার সন্দেহ হতে শুরু করল। “এত টাকা দিয়ে ফেললাম, কিন্তু এখনও একটা টাকা ফেরত পেলাম না!” ভেবে সে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করল, কিন্তু উত্তর আসা বন্ধ হয়ে গেল। ওয়েবসাইটটিও হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল।
রাহুল ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে বুঝতে পারল, সে সম্ভবত সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছে। হতাশ হয়ে সে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করল।
পুলিশ সাইবার ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করল। তারা রাজীবের দেওয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি ট্রেস করতে গিয়ে দেখল যে, এটি আসলে একটি আন্তর্জাতিক সাইবার ক্রাইম চক্রের একটি অংশ। ওয়েবসাইটটি চালানো হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে, এবং এর পিছনে ছিল ভুয়া প্রোফাইল, ফেক কোম্পানি এবং ডুপ্লিকেট নামের ব্যবহারের এক অসাধারণ চালাকি।
তদন্তের সময় আরও জানা গেল, এই ওয়েবসাইটটি প্রতি মাসে শত শত মানুষকে প্রতারণা করত, যারা সহজে টাকা আয়ের আশায় এখানে ইনভেস্ট করেছিল। এ চক্রটি এক দেশে বসে আরেক দেশের যুবকদের টার্গেট করত। যাতে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করা যায়।
রাজীবের ক্ষতি আর পূরণ হয়নি। তার চোখে প্রযুক্তির প্রতি এক বিশ্বাসের ভাঙন ধরেছিল। সে বুঝল, অনলাইনে দেখা প্রতিটি সুযোগ বা বিজ্ঞাপনই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে সে নিজেকে অপরাধবোধে ভুগতে লাগল, তবে তার সাথে এটাও উপলব্ধি করল যে, অনলাইনে সচেতন থাকা কতটা জরুরি।
এরপর থেকে রাহুল আরও বেশি সতর্ক হয়ে গেল। বন্ধুদেরও অনলাইনে নিরাপত্তার গুরুত্ব বোঝাতে লাগল, যাতে আর কেউ তার মতো এই প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয়।
________