ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা যেন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। মাস দেড়েক আগে দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল চারদিকে, আর সেই স্মৃতির দাগ এখনও শুকায়নি। এখানকার মানুষ তখনও সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ভুলে উঠতে পারেননি। কিন্তু আবারও যেন প্রকৃতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে তাদের সামনে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে অবিরাম বৃষ্টি, আর সেই বৃষ্টিতে ফুঁসে ওঠা দ্বারকেশ্বর। নদে জল বাড়তে বাড়তে সেই জল প্রবল স্রোতে ভেঙে ফেলে বাঁধ। নদীর পাড় ঘেঁষা কাকনান এলাকায় তখন তুমুল উত্তেজনা। মানুষজন ছুটোছুটি করছে, জল যেন এক ভয়াল অদৃশ্য দানবের মতো ধেয়ে আসছে গ্রামের দিকে।
রবিবার বিকেলের দিকে চারপাশের মাঠ-ঘাট প্রায় আড়াই ফুট জলর নিচে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষজন দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। চারদিকে উদ্বেগের সুর আর মানুষের আতঙ্কিত কণ্ঠ ভেসে আসছে। জল কাকনান গ্রামের প্রধান পিচ রাস্তা ছুঁয়েছে, আর সেটি ছুঁয়েই যেন গ্রামবাসীদের মনে পুরনো সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আবারও তাজা হয়ে উঠেছে।
ধান্যগোড়ির অনেক মানুষ ছোট্ট নৌকা বা বাঁশের ভেলা বানিয়ে কোনোভাবে নিজেদের এবং তাদের প্রাণীদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। কাকনানের কৃষক গোপাল মল্লিক সেই জলর ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “এই মাঠেই তো আমাদের সারা বছরের খাদ্যের ব্যবস্থা হয়। সবই এখন জলর নিচে,” তিনি বললেন, দুচোখে একরাশ শূন্যতা নিয়ে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, চারদিকে কেবল ভিজে কাঁদামাটি, আর ডুবন্ত ফসলের সুরভী মিশে যাচ্ছে বাতাসে। জল আর কাদা মেখে সব রাস্তা বন্ধ। গ্রামের প্রবীণ গঙ্গাপদ বাবু বললেন, “বছরের পর বছর আমাদের এভাবেই জীবন কাটাতে হচ্ছে। নদীর এই রুদ্র রূপ দেখতে দেখতে আমাদের মন ভরে গেছে, কিন্তু নদীর প্রতি ভয় কখনও কমেনি।”
এই রকম দুর্যোগের মধ্যেই কাকনান এলাকার স্থানীয় যুবকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে। তাদের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু একে অপরকে সাহায্য করার চেষ্টায় যেন এক অব্যক্ত শক্তি খুঁজে পাচ্ছে তারা।
সেই রাত ছিল নিস্তব্ধ, অথচ ভয়াল। বৃষ্টি থেমে গেলেও, নদীর ঢেউ আর স্রোতের শব্দ যেন কানে লেগেই ছিল। গ্রামবাসীদের মনে একটাই প্রশ্ন, “এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?”
|| সমাপ্ত ||
________