রাহুল, তার ভাই অর্জুন আর তাদের বন্ধু বিকাশ, তিনজন একদিন সকালে রওনা দেয় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। তাদের গন্তব্য ছিল গ্রামাঞ্চলের একটি মণ্ডপ, যেখানে রাহুলের পিসতুতো বোনের বিয়ে হওয়ার কথা। শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলো ছাড়িয়ে তারা গাড়ির জিপিএস চালু করে নতুন রাস্তা ধরেছিল, যেটি তাদের জন্য সেরা সময় সাশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
প্রযুক্তির উপর ভরসা
রাহুল গাড়ি চালাচ্ছিল, আর অর্জুন মোবাইলে গুগল ম্যাপ দেখে রাস্তাগুলো চেক করছিল। “দেখ, এই পথটা বেশি শর্টকাট,” অর্জুন বলে। বিকাশও গুগল ম্যাপের পরামর্শ মেনে যেতে বলে। কেউই তখন সন্দেহ করেনি যে, প্রযুক্তির এই উপর নির্ভরশীলতাই তাদের জন্য কাল হবে।
অজানা পথ
তারা এক সরু রাস্তায় পৌঁছায়, যেখানে চারপাশে ছিল ধানের ক্ষেত আর দূরে এক নদীর স্রোত। “এটাই কি ঠিক রাস্তা?” রাহুল সন্দেহ করে জিজ্ঞেস করে। অর্জুন আশ্বস্ত করে, “এটাই সঠিক। ম্যাপ তো তাই বলছে।”
বিপদের ইঙ্গিত
রাস্তা সরু হতে থাকে, আর দূরে একটি আধা-তৈরি সেতু দেখা যায়। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেনি, সেতুর সামনের অংশটি আসলে ভেঙে গেছে আগের বন্যায়। ম্যাপে সেতুটি সম্পূর্ণ দেখাচ্ছিল, যা ছিল তাদের ভুল পথে চালিত করার কারণ।
দুর্ঘটনার মুহূর্ত
গাড়ি দ্রুতগতিতে সেতুর দিকে এগোতে থাকে। হঠাৎ, বিকাশ চিৎকার করে, “আরে, সামনে কিছু নেই!” কিন্তু ততক্ষণে খুব দেরি হয়ে গেছে। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতু থেকে সরাসরি নদীর গভীর জলে পড়ে যায়।
নীরবতা
গ্রামের মানুষ দূর থেকে বিকট শব্দ শুনে ছুটে আসে। কিন্তু তারা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, গাড়ি ততক্ষণে ডুবে গেছে। মানুষ জড়ো হয়, আতঙ্ক আর শোক চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
উদ্ধার অভিযান
স্থানীয় প্রশাসন আর পুলিশ এসে জেসিবি আর দড়ির সাহায্যে গাড়ি নদী থেকে তোলার চেষ্টা করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর, গাড়ি উদ্ধার হয়। কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে তিনজনের নিথর দেহ বের করা হয়।
প্রযুক্তির বিশ্বাসঘাতকতা
পুলিশের তদন্তে জানা যায়, গুগল ম্যাপের তথ্য সঠিকভাবে আপডেট না থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে। সেতু ভেঙে যাওয়ার খবর সেই ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে তারা একটি মৃত রাস্তা ধরে চলেছিল।
পরিবারে শোকের ছায়া
রাহুল ও অর্জুনের বাবা-মা শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন। তাদের দুই ছেলে আর সেই সাথে তাদের বন্ধু, সবাই স্বপ্নের মতো এক মুহূর্তে হারিয়ে যায়। এই দুর্ঘটনা তাদের জীবনে এক গভীর শূন্যতা এনে দেয়।
শিক্ষার আহ্বান
এই ঘটনাটি সমাজে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়। শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা ভয়ানক হতে পারে, তা সবার মনে গেঁথে যায়।
একটি শিক্ষা
প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ, কিন্তু এর অন্ধভাবে অনুসরণ প্রায়ই বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই গল্প শুধু একটি দুর্ঘটনার নয়, এটি আমাদের সচেতনতা ও আত্মনির্ভরতার গুরুত্বকেও শেখায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি নিজের পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় জ্ঞানের উপরও ভরসা করা উচিত।
“প্রযুক্তি মানুষের জন্য, মানুষ প্রযুক্তির জন্য নয়।”
|| সমাপ্ত ||
________