HomeInspirational StoryAtmobiswaser Joy: আত্মবিশ্বাসের জয়

Atmobiswaser Joy: আত্মবিশ্বাসের জয়

বিয়ের চাপ আর প্রেমের দুঃখ

নীলার বয়স ২৮। কোলকাতা শহরের ব্যস্ত জীবনযাত্রার ভিড়ে সে একাকীত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। ক্যারিয়ার, বিয়ে, প্রেম—সবকিছু যেন তার জীবনে আটকে গেছে। চাকরি করেছে চার বছর, কিন্তু এখনো তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি। অফিসে সহকর্মীরা এগিয়ে যাচ্ছে, অথচ নীলা যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে। বাবা-মা প্রতিদিন একটাই প্রশ্ন করেন, “তোমার বিয়ের কথা ভাবছো কবে?”

এর মধ্যে ভালোবাসার মানুষটা তাকে ছেড়ে চলে গেছে আরও দু’বছর আগে। “তুমি নিজেই নিজের জীবন নিয়ে সুরাহা করতে পারো না, আমাদের ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়বে?” এই কথাটা আজও তার কানে বাজে।

মনের ঘরে ঝড়

নীলা রাতে ছাদে বসে শহরের আলো দেখে। মনে হয় এই আলো কেবল বাইরে, তার ভেতরে যেন ঘন কালো অন্ধকার। মাঝে মাঝে তার মনে হয়, সব ছেড়ে চলে যায়, কোথাও একা পালিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় যাবে? জীবন থেকে পালানো কি আসলেই সম্ভব?

একদিনের ঘটনা

একদিন অফিসে বসে বসে নীলা নিজের ছোট্ট খাতায় কিছু লিখছিল। এমন সময় তার বস তাকে হঠাৎ ডেকে পাঠান। “তুমি কি এই প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী?”—বস জিজ্ঞেস করলেন। বিষয়টা নতুন, এবং বেশ চ্যালেঞ্জিং। নীলা দ্বিধায় পড়ে গেল। এতদিন নিজের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতায় সে নিজেকে অযোগ্য মনে করত। কিন্তু এবার না বললে হয়তো নতুন কিছু শেখার সুযোগ চলে যাবে।

সে সাহস করে বলল, “হ্যাঁ স্যার, আমি চেষ্টা করব।”

মনের বাঁধা ভাঙা

প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন ছিল। ভুল হচ্ছিল, সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারছিল না। কিন্তু একসময় বুঝতে পারল, এই ভুলগুলোই তাকে শেখাচ্ছে। কিছুদিন পর, প্রজেক্টটা সফলভাবে শেষ হলো। নীলা প্রথমবার অনুভব করল, সে একটা বড় দায়িত্ব সামলাতে পেরেছে।

এই আত্মবিশ্বাস তাকে জীবনের অন্য সমস্যাগুলোর দিকেও নতুনভাবে তাকাতে শেখাল।

বিয়ের চাপ আর প্রেমের দুঃখ

নীলা এবার বিয়ের বিষয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলল। “আমাকে আর একটু সময় দাও। আমি নিজে ঠিক করতে চাই, কবে আমার জন্য সঠিক সময় হবে।” বাবা-মা অবাক হলেও মেনে নিলেন।

প্রেমের বিষয়ে, নীলা বুঝল যে সম্পর্ক চলে যাওয়া মানেই জীবনের সব শেষ নয়। যদি কেউ তাকে নিজের দুর্বলতার জন্য দোষারোপ করতে পারে, তবে সে মানুষ তার পাশে থাকার যোগ্যই ছিল না।

আশার আলো

এক সন্ধ্যায় নীলা অফিস থেকে ফেরার পথে দেখল এক ফুটপাতের ছেলেকে, যে তার টুকরো টুকরো কাগজের খেলনা বিক্রি করছে। ছেলেটি হাসিমুখে বলল, “দিদি, একটা নিন। এটা আমার হাতে বানানো।” নীলা সেই হাসিটা দেখে অবাক হলো। এত কষ্টের মধ্যেও ছেলেটি এতটা আনন্দ নিয়ে তার কাজ করছে!

নীলা সেই খেলনাটা কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরল। খেলনাটা তার ডেস্কে রাখল, যেন প্রতিদিন তাকে মনে করিয়ে দেয়—আনন্দ জীবন থেকে আসে না, বরং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আসে।

শেষ কথা

আজ নীলা আগের চেয়ে অনেক শক্ত। সে এখনো জীবনের সব উত্তর খুঁজে পায়নি। কিন্তু জানে যে খুঁজতে হবে। জীবনের চাপ, হতাশা, প্রেমের ব্যর্থতা—সবই জীবনের অংশ। এগুলো সামলে এগিয়ে চলাই আসল কথা।

এই গল্প যদি কাউকে শেখাতে পারে যে জীবনের যেকোনো মুহূর্তে নতুন করে শুরু করা যায়, তবে হয়তো এটি সার্থক। জীবন চলার পথে ব্যর্থতা আসবেই, কিন্তু সেই ব্যর্থতা দিয়েই সাফল্যের গল্প গড়া যায়।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন