HomeInspirational StoryInspirational Story of Bardhaman: পথের গহীনে আলো

Inspirational Story of Bardhaman: পথের গহীনে আলো

আবাস যোজনায় তার বাবার নাম ওঠেনি।

সকাল তখন ছয়টা। ভাতারের কাঁচা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে এক টোটো। টোটোর সামনের আসনে বসে এক মহিলা দৃঢ় হাতে স্টিয়ারিং ধরেছেন, আর তার বুকের কাছে আঁটোসাঁটো বাঁধা চার বছরের এক শিশু। কাঁচা রাস্তার ঝাঁকিতে শিশুটি মাঝে মাঝে চোখ মেলে তাকায়, আবার শান্তভাবে মাথা মায়ের বুকের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। এই মহিলার নাম সুস্মিতা রোম। ভাতারের প্রথম মহিলা টোটোচালক। তার পরিচিতি আজ শুধু গ্রামের মানুষদের মধ্যে নয়, গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই পরিচিতি সহজে আসেনি।

সবকিছু হারানোর পরে নতুন লড়াই

বছর দেড়েক আগে সুস্মিতার স্বামী মারা গেছেন। দু’মাস আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। যে বাবা কষ্ট করে টোটো চালিয়ে সংসার চালাতেন, সেই বাবার মৃত্যুর পর যেন জীবন আরও কঠিন হয়ে গেল। বাড়িতে অসুস্থ মা, আর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন চার বছরের ছেলে। বাবার রেখে যাওয়া টোটোটাই তখন সুস্মিতার একমাত্র ভরসা।

প্রথমে টোটো চালানোর সাহস করতে পারেননি। গ্রামের একজনের কাছ থেকে শিখতে শুরু করলেন। রাস্তায় নেমে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, যাত্রীরা ভয় পায়। “মহিলা টোটো চালক! ঠিক চালাতে পারবে তো?”—এই সন্দেহ ছিল সবার মনে। কিন্তু সুস্মিতা দমেননি। তার হাতে টোটোর স্টিয়ারিং যতটা শক্ত ছিল, তার চেয়েও শক্ত ছিল তার মানসিক দৃঢ়তা।

টোটোই বাঁচার ভরসা

প্রথম প্রথম দিনে খুব কম রোজগার হত। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রামের লোকজন বুঝতে পারল, সুস্মিতা একজন দক্ষ চালক। স্টেশন, বাজার, ডাক্তারখানা—সব জায়গায় যেতে তারা এখন সুস্মিতার টোটোই খোঁজে। দিনে ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। এই টাকার একটা অংশ টোটোর কিস্তি দিতে হয়, বাকি দিয়ে সংসার চলে।

টোটোর সামনের সিটেই থাকে তার ছোট ছেলে। সুস্মিতা জানেন, অসুস্থ মায়ের দেখাশোনার ফাঁকে ছেলেকে দেখার সময় নেই। তাই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন। পথের ঝাঁকিতে ছেলে যেন রাস্তাটাই তার খেলার জায়গা বানিয়ে নিয়েছে।

সহযোগিতা আর আশার আলো

সুস্মিতা বলেন, “অন্য টোটো চালকেরা আমাকে খুব সাহায্য করেন। তারা আমাকে শিখিয়েছে, সাহস থাকতে হয়।” অরূপ রায়, তরুণ চট্টোপাধ্যায়, রাজিব শেখের মতো টোটোচালকেরা তার লড়াই দেখে অনুপ্রাণিত। তারা চায় প্রশাসন তার পরিবারকে সহযোগিতা করুক।

আবাস যোজনায় নাম নেই, তবু আশা বেঁচে আছে

খড়ের চালের দু’কুঠুরির মাটির ঘরে থাকেন সুস্মিতা। সরকারি আবাস যোজনায় তার বাবার নাম ওঠেনি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান বলছেন, “নতুন তালিকা হলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।” কিন্তু এই আশ্বাসেও সুস্মিতা ভরসা করেন না। তার কাছে এখনকার লড়াইটাই আসল।

জীবনের পাঠ

“আমাকে বাঁচতেই হবে। মা আর ছেলের জন্য আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।”—সুস্মিতা যখন এই কথাগুলো বলেন, তখন তার চোখে ক্লান্তির ছায়া নেই। বরং ভরপুর আত্মবিশ্বাস।

সুস্মিতার গল্প শুধু একজন মহিলার নয়, জীবনের সব বাধা ভেঙে এগিয়ে চলার প্রতীক। রাস্তায় প্রতিদিন ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই টোটোচালক শিখিয়ে দেন, যত অন্ধকারই আসুক, আলো খুঁজে নেওয়া সম্ভব। জীবন কখনও থেমে থাকে না।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন