চন্দননগরের এক শীতল বিকেল। কুণ্ডুঘাটের নবকুমার বিশ্বাসের ঘরজুড়ে অদ্ভুত নীরবতা। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেখানে ছয় বছরের প্রাণবন্ত নিখিল কার্টুন দেখে হাসছিল, সেখানে এখন শোকের মেঘ। তনুশ্রী বিশ্বাস সারা দিন বাইরে কাজ সেরে ছুটে এসেছেন, কিন্তু এসে দেখলেন যে তাঁর ঘর যেন হঠাৎ করে কেমন অপরিচিত।
শান্ত দুপুরের রহস্য
তনুশ্রী যখন দুপুরে বের হন, তখন নিখিল ঘরে কার্টুন দেখে হাসছিল। মায়ের আদেশে খাওয়া শেষ করে লাল কম্বলে মুড়ে শুয়েছিল। বাড়ির গেট খোলা ছিল, তালা লাগানোর কথা মাথায় ছিল না। মেয়েটি স্কুল থেকে ফেরার পরই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। নিখিল আর উঠছে না। হাত-পা ঠান্ডা বরফের মতো। কী হয়েছিল?
লুকানো আঘাত
তনুশ্রী ও নবকুমার শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। চিকিৎসক জানালেন, নিখিল বেঁচে নেই। সেই সঙ্গে পুলিশও জানাল—অস্বাভাবিক মৃত্যু। শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই, কিন্তু বাচ্চার হঠাৎ এমন মৃত্যু সন্দেহজনক।
আলমারির রহস্য
নবকুমার যখন স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন আচমকাই চোখ পড়ে আলমারির চাবির দিকে। চাবি ঝুলছে, অথচ তনুশ্রী জানেন না কে সেটি নিয়েছিল। খুলে দেখেন, ভেতরের টাকা-পয়সা ও গয়না গায়েব। একটা অদ্ভুত শীতল শঙ্কা তাঁর মনের ভেতর দানা বাঁধল।
“কেউ কি ঘরে ঢুকে আমাদের ছেলেকে মেরে গয়না নিয়ে গেল?” নবকুমার বললেন। স্ত্রীও হতভম্ব হয়ে গেলেন। গেট খোলা ছিল, ঘরের ভেতরের দরজাও তালাবদ্ধ ছিল না। কিন্তু এমন কীভাবে সম্ভব?
নিখিলের নীরবতা
নিখিলের দিদি জানায়, কয়েক দিন ধরে ভাইটি নাকি বেশ চুপচাপ ছিল। স্কুলে গিয়ে হাসত না, বাড়িতে মন খারাপ করে থাকত। বাবা-মা ভেবেছিলেন, হয়তো শরীর খারাপ করছে। ডাক্তার দেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ডাক্তার দেখানোর আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
অপরিচিত ছায়া
তদন্তে নামল পুলিশ। প্রতিবেশীরা জানাল, দুপুরের দিকে একজন অপরিচিত লোককে ওই এলাকার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল। ছেলেটি কার্টুনে ব্যস্ত ছিল, তাই বুঝতেও পারেনি যে কেউ ঘরে ঢুকেছে। তনুশ্রী বেরিয়ে যাওয়ার পর কেউ যদি এসে নিখিলকে চুপ করিয়ে দিয়ে আলমারির চাবি খুঁজে নেয়, তবে সেটা অস্বাভাবিক নয়।
রহস্যের গভীরে
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেল, নিখিলের শরীরে বিষাক্ত কোনো গ্যাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে। কেউ হয়তো তাকে ঘুমের ওষুধ বা বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে গিয়েছে। কিন্তু এত ছোট ঘরে এত নিখুঁতভাবে কাজ করার সাহস কেউ পেল কীভাবে?
পুলিশ স্থানীয় এক পরিচিত চোরের খোঁজ করল, যার কাজ চুরি। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অদ্ভুতভাবে চুপ করে রইল। একবারও চোখে চোখ রাখতে পারল না।
চোর নাকি পরিচিত কেউ?
তনুশ্রী ও নবকুমার এখনও শোকে বিহ্বল। তাঁদের সন্দেহ, এই কাজ চোরের হলেও কোনো পরিচিত ব্যক্তির সাহায্য ছাড়া এতটা সম্ভব নয়। কে ছিল এই অপরিচিত ছায়া? ঘরের গোপন চাবির কথা জানলই বা কীভাবে?
একটা ঠান্ডা রহস্য চন্দননগরের কুণ্ডুঘাটের বাতাসে ভাসছে। নিখিলের ছোট শরীর যেমন এখন নিশ্চুপ, তেমনি থমকে আছে সমস্ত সত্য।
বিঃ দ্রঃ – চন্দননগরের ঘটনা অবলম্বনে লেখা।
|| সমাপ্ত ||
________