মুম্বই শহরের গলিতে এক সাঁই সাঁই করে চলা ট্রাফিকের মধ্যে, এক তরুণী হেঁটে যাচ্ছিল। তার চোখে হতাশার কোনও চিহ্ন ছিল না, বরং এক অদ্ভুত তেজ ছিল। নাম তার সমান্থা রুখু প্রভু। এই নাম আজ আর অজানা নয়, তার ছবির পোস্টার সারা শহর জুড়ে ঝুলছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই মেয়েটির পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক কঠিন সংগ্রামের কাহিনী।
সমান্থা যখন প্রথম মডেলিং শুরু করেছিলেন, তখন তার জীবন ছিল একেবারে আলাদা। তিনি শুধুমাত্র একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকতেন, যেখানে কোনও স্থিতিশীলতা ছিল না। বাড়ির আর্থিক অবস্থা এমনই ছিল যে, একেকদিন এক বেলার খাবার জোগানো ছিল একটা যুদ্ধ। কিন্তু সেই যুদ্ধ তাকে তাড়িত করেছিল, চুপ করে থাকতে দেননি। প্রতিদিনের সংগ্রাম যেন তাকে নতুন নতুন শক্তি দিচ্ছিল।
একদিন, এক প্রখ্যাত ফ্যাশন শোতে যাওয়ার আগের রাতে, সমান্থা নিজের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে চিন্তা করছিলেন। মডেলিংয়ের কাজ শুরু করতে গিয়ে অনেক বার তাকে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। তিনি জানতেন, কোনো কিছুতেই থামলে সে তার স্বপ্নের কাছ থেকে আরও দূরে চলে যাবে। তাই কখনও তার শোয়ের জন্য একবেলা খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে, কখনও সিগনালেই দাঁড়িয়ে ছিল একা, বাঁচতে আর টিকতে।
“আমি জানতাম, এটা আমার একমাত্র সুযোগ। আর আমি কোনোভাবেই হারতে পারব না,” বলেছিলেন সমান্থা, এক সাক্ষাৎকারে।
তবে, যে রাতগুলো তিনি কোনো শোয়ের জন্য অপেক্ষা করতেন, সেগুলোর মধ্যে কখনও খাবার টাকার অভাবে জোর করে ইঁটের চেয়ে কঠিন মনে হতো। একদিন, তাঁর অদ্ভুত সংকল্প তাকে নিয়ে গিয়েছিল প্রথম বড় ব্রেকের দিকে। সেই রাতে শোয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখেছিলেন, কীভাবে সবাই তাকিয়ে ছিল তার দিকে। তার নাম তখনও পরিচিত হয়নি, তবে তার মুখের ভিতর ছিল এক প্রকার অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস।
সময় পেরিয়ে গেলে, সমান্থা একের পর এক বড় প্রজেক্টে সই করলেন। প্রথম বড় সিনেমায় যখন কাজ শুরু করলেন, তখন তিনি যেন এক নতুন জীবন শুরু করছিলেন। বলিউডের তারকাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পাওয়া, পবন কল্যাণ, মহেশ বাবু এবং আল্লু অর্জুনের মতো বড় মাপের তারকাদের সাথে শুটিং করাও ছিল তার জন্য এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা।
কিন্তু সে সময়গুলোর কথা কখনোই ভুলে যাননি তিনি। জানতেন, এই সাফল্য অর্জন করা কেবল একটি গন্তব্যের শেষ না, বরং জীবনের এক শুরুর পথ। আজ যখন ‘পুষ্পা’ সিনেমায় তার ‘ঊঁ আঁটাভা’ গানে সারা পৃথিবী তার দিকে তাকিয়ে, তখনো তিনি জানেন, কত কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন।
তবে, তার হৃদয়ে এক চিরস্থায়ী প্রেরণা ছিল, সেই লড়াইয়ের দিনগুলোর স্মৃতি। সমান্থা বিশ্বাস করেন, প্রতিটি সংগ্রাম তাকে শুধু শক্তি দেয়নি, বরং তাকে শিখিয়েছে কীভাবে নিজের লক্ষ্যকে অটুট রেখে এগিয়ে যেতে হয়। আজও, যখন তার কাজের মাধ্যমে লাখো মানুষের মন জয় হয়, তার চেহারায় এক আশ্চর্য শান্তি ছড়িয়ে পড়ে, যেন তিনি জানেন, তার সাফল্যের আসল মূল্য ওই সংগ্রামেই লুকিয়ে ছিল।
“আমার গল্পটা শুধু সংগ্রামের নয়, বরং এক অদম্য মনোবলের গল্প,” বলেছিলেন সমান্থা, তার সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পর।
আজকের দিনে যখন সমান্থা পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয়, তখন তার জীবনের প্রথম দিকের স্মৃতিগুলো তাকে আরও তাজা করে তুলে। তিনি জানেন, সাফল্য অনেক সময় রাতারাতি আসে না, কিন্তু সংগ্রাম একদিন সাফল্যের রূপ নেয়।
বিঃ দ্রঃ – দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থার জীবন কাহিনী অবলম্বনে লেখা।
|| সমাপ্ত ||
________