HomeStory of WestbengalJhargram: ক্লাস রুমে ৪ ফুটের ধ্বস

Jhargram: ক্লাস রুমে ৪ ফুটের ধ্বস

“স্যার!” চিৎকার করে উঠল দীপু, কিন্তু...

ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামের নিচু পাতিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছোট হলেও চিরচেনা গমগমে পরিবেশে পূর্ণ। সুবর্ণরেখা নদীর কাছাকাছি অবস্থিত এই স্কুলটি ছিল গ্রামের সব ছাত্রছাত্রীর আপন ভরসাস্থল। পুরোনো ভবনটি প্রায় ছন্দময় ব্যস্ততায় মগ্ন থাকত। তবে ২০০৬ সালের বন্যার পর থেকে স্কুলটি যেন একটু শঙ্কার ছায়ায় ডুবে ছিল।

সেদিন বুধবারের সকালটাও ছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। গরমের দুপুরটা ঢেকে রাখার জন্য ক্লাসরুমের জানালা খোলা ছিল। শিক্ষক অনুকূল কুমার বেরা ইতিহাস পড়াচ্ছিলেন ক্লাস ফোরের ছাত্রদের। সময় তখন এগারোটা পঁচিশ। বেঞ্চে বসে থাকা শুভম, রাজেশ, বিকাশ আর ছোট্ট দীপু মন দিয়ে পড়া শুনছিল। হঠাৎ, একটা প্রচণ্ড আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গেই বেঞ্চটা কাঁপতে শুরু করে।

“স্যার!” চিৎকার করে উঠল দীপু, কিন্তু তার চিৎকার শেষ হওয়ার আগেই বেঞ্চ সমেত চারজন মাটির নিচে তলিয়ে গেল। ক্লাসরুমে পিনপতন নীরবতা। চোখের সামনে এমন ভয়ানক ঘটনা দেখে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল।

“বাঁচাও! কেউ বাঁচাও!” মাটির তলা থেকে ভেসে এল কান্নাভেজা কণ্ঠ। শিক্ষক অনুকূল বেরা দ্রুত গিয়ে দেখলেন, গর্তের নিচে পড়ুয়ারা আটকে আছে। তিনি চিৎকার করে বললেন, “সবাই শান্ত থাকো! আমরা আসছি!”

অন্য শিক্ষক ও গ্রামবাসীরা তৎক্ষণাৎ ছুটে এলেন। একত্রে মাটি খুঁড়ে, দড়ি নামিয়ে একে একে চারজনকে গর্ত থেকে তুলে আনা হল। দীপু আর শুভমের পায়ে চোট লেগেছিল। স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে তাদের চিকিৎসা শুরু হল।

এদিকে পুরো গ্রামে আতঙ্কের ছায়া। অভিভাবকেরা স্কুলে ছুটে এলেন। অনেকেই বললেন, “এই স্কুলে আর পড়াতে পারব না। এত বিপজ্জনক!”

তবে স্কুলের শিক্ষকরা ভেঙে পড়েননি। শিক্ষকদের মধ্যে অনুকূলবাবু বললেন, “ভয় পেলে চলবে না। এই স্কুলকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার, আমরা সব করব।”

কয়েকদিনের মধ্যে প্রশাসনের সাহায্যে স্কুলটির জরুরি সংস্কার শুরু হল। শিক্ষার্থীদের অন্য স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল। আর দীপু? সে তো সুস্থ হয়েই স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে শুরু করে দিয়েছে। শুধু মাঝেমধ্যে সে তার বন্ধুদের বলে, “তোমরা জানো? মাটির নিচে কত অন্ধকার!”

গর্তের অতল থেকে উঠে আসার গল্পটা আজও নয়াগ্রামে শোনা যায়। ভয় আর সংকটকে জয় করার কাহিনি হয়ে।

বিঃ দ্রঃ – বেশ কয়েকমাস আগের ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম থানার নিচু পাতিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাহিনী অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন