গ্রামের প্রান্তে বটগাছের নিচে ছেলেটিকে প্রথম দেখা যায়। ধুলোমাখা পোশাক, অগোছালো চুল, এবং গলায় ঝুলে থাকা রুদ্রাক্ষের মালা—তার পুরো চেহারায় ছিল এক অদ্ভুত রহস্য। কেউ জানত না সে কোথা থেকে এসেছে। তার নাম জিজ্ঞেস করলেই সে হাসত, কিন্তু কিছু বলত না।
গ্রামের মানুষজন তাকে “অচেনা ছেলে” বলে ডাকত। বিশেষ করে রুদ্রাক্ষের মালা নিয়ে কৌতূহল ছিল সবার। সাধারণত, এমন মালা সন্ন্যাসী বা তান্ত্রিকরা পরে। কিন্তু এই ছেলেটির বয়স তো মাত্র পনেরো-ষোলো!
একদিন গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মধু কাকা ছেলেটিকে ডাকলেন।
“এই মালাটা কোথা থেকে পেলি?” মধু কাকা জানতে চাইলেন।
ছেলেটি একটু চুপ করে থাকল, তারপর মৃদুস্বরে বলল, “মালা আমার নয়। আমার বাবার।”
কথাটি শুনে সবাই বিস্মিত হলো। তার বাবা কোথায়?
“তোর বাবা কোথায়?” মধু কাকার প্রশ্নে ছেলেটি এবার আরও গম্ভীর হয়ে গেল।
“বাবা মারা গেছেন। এই মালাটা তার কাছেই ছিল। মারা যাওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘মালাটা কখনও খুলবি না। খুললে সর্বনাশ হবে।’ ”
কথাটা শোনার পর থেকেই গ্রামের মানুষ আরও সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠল। কেউ কেউ বলল, মালায় কোনো অলৌকিক শক্তি আছে। আবার কেউ কেউ বলল, এটি কোনো অভিশপ্ত বস্তু।
রহস্য ঘনিয়ে উঠল
এক রাতে গ্রামের মন্দিরের পুরোহিত স্বপ্নে দেখলেন, রুদ্রাক্ষের মালাটি কোনো কালো যাদুর ফল। পুরোহিত পরদিন ভোরে ছেলেটির কাছে গিয়ে মালাটা খুলতে বললেন।
ছেলেটি ভীত কণ্ঠে বলল, “মালা খুললে বিপদ হবে। বাবা বলেছেন। আমি খুলব না।”
কিন্তু পুরোহিত একরকম জোর করেই মালাটা ছেলেটির গলা থেকে খুলে ফেললেন।
মালাটা খুলতেই অদ্ভুত কিছু ঘটল। হঠাৎ চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল, আর বটগাছের নিচে বাতাস দুলতে শুরু করল। গ্রামের সবাই সেখানে জড়ো হয়ে দেখল, মাটির নিচ থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে।
পুরোহিত চিৎকার করে বললেন, “এটা অভিশপ্ত মালা! ছেলেটা তো নয়, মালাটাই এখানে বিপদ ডেকে এনেছে।”
মালাটা মাটিতে ছুঁড়তেই তা থেকে আগুনের শিখা উঠল, আর একটি ভয়ানক ছায়ামূর্তি আকাশে ভেসে উঠল। ছায়ামূর্তি গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “এই মালা যে ধারণ করে, সে আমার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু তোমরা আমার আশ্রয় নষ্ট করেছ। এখন তোমরা সবাই শাস্তি পাবে!”
গ্রামের মানুষ আতঙ্কে চিৎকার করে পালিয়ে গেল। পরদিন সকাল হলে দেখা গেল, ছেলেটি আর সেখানে নেই।
শেষ প্রশ্ন
আজও কেউ জানে না, রুদ্রাক্ষের মালার রহস্যটা আসলে কী। মালাটা কি সত্যিই অভিশপ্ত ছিল, নাকি ছেলেটি নিজেই কোনো অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিল?
রহস্যটা আজও অমীমাংসিত। তবে গ্রামের বটগাছের নিচে কেউ আর সন্ধ্যার পর যেতে সাহস পায় না।
|| সমাপ্ত ||
________