সাগর ছিল শান্ত, আকাশে তারার ঝিকিমিকি। মাঝরাতে বাংলাদেশি বার্জ ‘সি ওয়ার্ল্ড’ ধীরে ধীরে মুড়িগঙ্গার স্রোতে এগোচ্ছিল। বিপুল পরিমাণ ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে চলেছিল সেটি, গন্তব্য ভারত থেকে বাংলাদেশ।
কিন্তু হঠাৎ করেই সব বদলে গেল…
বিপদের সংকেত
বার্জটি যখন ঘোড়ামারা দ্বীপের কাছে পৌঁছোয়, তখনই ঘটে বিপর্যয়। নদীর গভীরতা কম ছিল, বার্জের ভারও ছিল বেশি। আচমকা একটি শক্ত চরে ধাক্কা খেয়ে কেঁপে উঠল পুরো জাহাজ।
ক্যাপ্টেন রাশিদুর রহমান চিৎকার করে বললেন, “জল ঢুকছে! সবাই সাবধান!”
নাবিকরা আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করল। এক মুহূর্তের মধ্যে নিচের ডেকে তীব্র গর্জন শোনা গেল—লোহার পাটাতন ফেটে গেছে! প্রবল বেগে জল ঢুকছে ভিতরে।
রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশি নাবিকদের মুখ শুকিয়ে গেল। কাঁপা গলায় একজন বলে উঠল, “আমরা কি বাঁচব, ক্যাপ্টেন?”
বার্জের মৃত্যু এবং সাগরের বিষ
সকালের আলো ফোটার আগেই সাগর থানার পুলিশ উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১২ জন নাবিককে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়, কিন্তু বার্জের অবস্থা তখন শোচনীয়। সেটি মাঝখান থেকে ভেঙে যেতে শুরু করেছিল—ঠিক টাইটানিকের মতো!
বার্জটি টেনে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছিল, কিন্তু ভার কমানোর জন্য ফ্লাই অ্যাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল। কালো ধোঁয়ার মতো সেই ফ্লাই অ্যাশ ধীরে ধীরে জলের সঙ্গে মিশতে থাকে, আর নদীর স্বচ্ছ নীল জল পরিণত হয় ধূসর, বিষাক্ত এক স্রোতে।
স্থানীয় এক জেলে বিমল মণ্ডল হতাশ গলায় বললেন, “এই নদীর জলেই আমরা মাছ ধরি, এটাই আমাদের জীবন। কিন্তু এখন দেখুন, জল কেমন কালো হয়ে গেছে!”
গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জীব সাগর চিন্তিত কণ্ঠে বললেন, “এই দূষণ কী পরিমাণ ক্ষতি করবে, কেউ জানে না! মাছ, কাঁকড়া সব মারা গেলে কী হবে? এই নদী আমাদের জীবন, এখন তা বিষে ভরে যাচ্ছে।”
নদীর কান্না, মানুষের অসহায়তা
এক সপ্তাহ কেটে গেল, নদীর রং বদলে গেছে, মাছের দল মরে ভেসে উঠছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে—তাদের নদীই যেন এক বিষাক্ত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে।
বার্জটি শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা গেল কি না, তা বড় প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হলো—এই দুর্ঘটনা কি শুধু একটি জাহাজের মৃত্যু, নাকি একটি নদীর, একটি জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া?
বিঃ দ্রঃ – ডায়মন্ড হারবারের বার্যের দুর্ঘটনা নিয়ে লিখিত এই কাহিনী।
|| সমাপ্ত ||