পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রাম সমুদ্রগড় দক্ষিণবাটি, যেখানে সাধারণত সন্ধ্যে নামে একটানা শান্তির ছোঁয়ায়। কিন্তু সে দিন সকাল থেকেই সেখানে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। জলের পাইপ বসানোর সময় আচমকাই দেখা যায়, পাইপের মুখ থেকে গ্যাস বেরোচ্ছে! প্রথমে মিস্ত্রিরা ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি, কিন্তু সন্দেহ দানা বাঁধতেই তাঁরা পরীক্ষার জন্য আগুন ধরান পাইপের মুখে। মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন!
গ্রামের লোকজন প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি। পানীয় জলের পাইপ থেকে আগুন! এও কি সম্ভব? খবর চাউর হতেই এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হয় পুলিশ, দমকল বাহিনী এবং ওএনজিসি-র কিছু আধিকারিক। তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে থাকেন, কিন্তু কেউই কিছু নিশ্চিত করে বলতে পারছিলেন না।
গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি, আবদুল গফুর, বললেন, “এই জায়গাটা এক সময় জলাশয় ছিল। অনেক আগে এখানে কিছু পুরনো খননকার্যের কাজ হত বলে শুনেছি। তবে এভাবে আগুন বেরোনোর বিষয়টা আশ্চর্যজনক।”
ওএনজিসি-র এক বিজ্ঞানী নমুনা পরীক্ষা করতে করতেই বললেন, “মাটির গভীরে থাকা কিছু জৈব পদার্থ থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এটাই পাইপলাইন দিয়ে বেরিয়ে আসছে এবং বাতাসের সংস্পর্শে এসে আগুন ধরে যাচ্ছে।”
কিন্তু সত্যিই কি ব্যাপারটা এত সহজ?
সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসতেই এলাকার আরও কিছু মানুষ জড়ো হন। হঠাৎ করেই এক যুবক চিৎকার করে ওঠে, “ওই দেখুন! আগুনটা এক জায়গায় নেই! এটা যেন সরছে!”
সবাই চমকে ওঠে। আগুনটা যেন ধীরে ধীরে মাটির এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরছে! পুলিশের এক অফিসার টর্চের আলো ফেলতেই দেখা যায়, মাটির নীচে যেন কিছু একটা নড়ছে!
এতক্ষণে সবাই বুঝতে পারল, শুধু গ্যাস নয়, এর পেছনে আরও কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে। ওএনজিসি-র আধিকারিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বড়সড় অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেন। পরদিন খননকাজ শুরু হতেই বেরিয়ে আসে এক পুরনো সুড়ঙ্গপথ, যার ভেতরে পড়ে আছে কিছু জং ধরা যন্ত্রপাতি ও কয়েকটি পুরনো টিনের কৌটো।
এক প্রবীণ ব্যক্তি বললেন, “আমার দাদু বলতেন, বহু বছর আগে এখানে কিছু খনি শ্রমিক কাজ করত। হয়তো তখনকারই কোনো চাপা পড়ে থাকা খনি, যেখান থেকে আজ এই গ্যাস বেরিয়ে আসছে।”
কিন্তু হঠাৎই একটি ভয়ংকর আওয়াজ আসে সুড়ঙ্গের ভেতর থেকে! উপস্থিত সবাই শিহরিত হয়ে যায়। কি আছে সেই সুড়ঙ্গের গভীরে? পুরনো কাহিনির মতো কোনো গুপ্তধন, না কি এর পেছনে অন্য কোনো অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে?
গ্রামের মানুষদের মনে তখন একটাই প্রশ্ন—এ কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা, না কি সত্যিই অতীতের কোনো গোপন কাহিনি আজ সামনে আসতে চাইছে?
বিঃ দ্রঃ – পুর্ব বর্ধমানের কালনায় পাম্প বসানোর ঘটনার সাথে কাল্পনিক কাহিনী জুড়ে লিখিত এই গল্প।
|| সমাপ্ত ||