সকালটা ছিল একদম প্রতিদিনের মতোই। দুর্গাপুরের কালীপুর এলাকার বাসিন্দা সাধন বাউড়ি ঘুম থেকে উঠে দ্রুত তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাড়ির সামনের ছোট উঠোনে বসে থাকা তাঁর স্ত্রী মালতী শেষবারের মতো স্বামীর মুখের দিকে তাকান। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ, সংসারের যাবতীয় খরচ – সবটাই ছিল সাধনের কাঁধে। তাই কোনো ক্লান্তি ছিল না, ছিল শুধু একরাশ দায়িত্ববোধ।
কারখানার গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই একঝাঁক ঠিকা শ্রমিকের সাথে মিশে গেলেন সাধন। তাঁর কাজ পাওয়ার প্লান্টের মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের। ঘাম ঝরানো পরিশ্রম সত্ত্বেও তেমন কোনো স্থায়িত্ব ছিল না তাঁর চাকরিতে। তবুও তিনি ভরসা রাখতেন, কারণ একমাত্র এটুকুই ছিল সংসার চালানোর অবলম্বন।
দুপুর গড়িয়ে এসেছিল, সবাই তখন খাবারের বিরতির অপেক্ষায়। আচমকাই কারখানার একটি ট্রান্সফর্মার বিকট শব্দে ফেটে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ছুটতে শুরু করে, কিন্তু সাধন আর নড়তে পারেননি। এক মুহূর্তের মধ্যে ঝলসে যান তিনি। তাঁর দুই সহকর্মীও আহত হন, তবে প্রাণে বেঁচে যান।
খবরটা পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। মালতী প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। ছুটে গেলেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলেন তাঁর স্বামী নিথর পড়ে আছে। কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। তাঁদের ছোট্ট মেয়ে বাবার হাত ধরে বলছিল, “বাবা, উঠো! তুমি সকালে বলেছিলে নতুন জামা কিনে দেবে!”
কারখানার শ্রমিকদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঠিকা শ্রমিকদের এমন অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করানো কেন? কেন কারখানা কর্তৃপক্ষের নজর ছিল না? পরিবারটির দাবি একটাই—প্রস্তুত থাকুক ক্ষতিপূরণ ও অন্তত পরিবারের একজনের চাকরির ব্যবস্থা হোক।
পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, মালতী এখনো স্বামীর ব্যবহৃত সেই পুরনো হাতঘড়িটা শক্ত করে ধরে আছেন। সময় যেন থমকে গেছে তাঁর জীবনে। সাধন আর ফিরবেন না, কিন্তু তাঁর পরিবারের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটাই এখন সবার প্রশ্ন।
বিঃদ্রঃ – দূর্গাপুরের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত এই কাহিনী।
|| সমাপ্ত ||