ঝাঁ চকচকে রাস্তার উপর দিয়ে ক্যাঁচর ক্যাঁচর শব্দ তুলে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে একখানা গরুর গাড়ি। চারপাশে মানুষের ভিড়। কেউ মোবাইল বের করে ছবি তুলছে, কেউ আবার অবাক হয়ে বলছে,
“এ যুগে গরুর গাড়ি?!”
গাড়িটা কিন্তু সাধারণ নয়, রঙিন ফুল আর লাল-সোনালি কাপড়ে সাজানো একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিতে চলছে। ভিতরে বসে আছেন নতুন বর জীবনানন্দ দে এবং নববধূ নিবেদিতা মাঝি। কনের গাঢ় লাল শাড়ির আঁচল হালকা হাওয়ায় উড়ছে, আর জীবনানন্দের চোখেমুখে একরাশ তৃপ্তি।
এক অন্যরকম সিদ্ধান্ত
জীবনানন্দ যখন বাড়িতে বললেন যে তিনি গরুর গাড়িতে চেপে বিয়ে করতে যাবেন, প্রথমে সবাই ভেবেছিল—এ কেমন কথা!
মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বললেন,
“সবার সামনে আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে না তো?”
বাবা গম্ভীর গলায় বললেন,
“তোমার চাকরি-টাকরি আছে, এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু ভাবতে পারতে।”
কিন্তু জীবনানন্দ নাছোড়বান্দা। ছোটবেলা থেকেই দাদু-ঠাকুমার মুখে শুনেছেন, একসময় কনেকে গরুর গাড়িতে করে বরণ করে আনা হত। এখন সময় বদলেছে, বিলাসবহুল গাড়ির ভিড়ে পালকি, গরুর গাড়ির ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। জীবনানন্দ চেয়েছিলেন—এই প্রাচীন রীতি একবার হলেও ফিরে আসুক।
নিবেদিতা প্রথমে একটু অবাক হলেও, পরে বললেন,
“এটা তো সত্যিই দারুণ ব্যাপার হবে! একেবারে সিনেমার মতো।”
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে ফিরে যাওয়া
বিয়ের দিন সকালে, পুরো গ্রাম হইহই করে উঠল। কেউ বলছে, “এ তো রাজকীয় ব্যাপার!” কেউ আবার হাসতে হাসতে বলল, “এ যুগেও এমন হয় নাকি?”
কিন্তু যখন দেখা গেল ফুলে মোড়া গরুর গাড়িতে বর-কনে বসে রয়েছেন, তখন সবাই মোহিত হয়ে গেল। ছোটো ছোটো বাচ্চারা দৌড়ে এসে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে, বৃদ্ধরা বলছেন,
“এই তো আমাদের ছোটোবেলার ছবি ফিরল!”
গরুর গাড়ির গতি স্লথ, কিন্তু এই ধীরগতিই যেন আলাদা সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। কোনো হর্ন নেই, নেই দ্রুতগতির যন্ত্রের অস্বস্তি। শুধু গরুর পায়ের শব্দ আর গাড়ির ক্যাঁচর ক্যাঁচর ধ্বনি—এক অনন্য ছন্দ তুলে ধরছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
বিয়ের পর গ্রামে ফিরে আসার সময় অনেকেই মোবাইল তুলে ছবি তুলল, কেউ ভিডিও করল। সন্ধ্যার আগেই জীবনানন্দ-নিবেদিতার গরুর গাড়ির বিয়ে ভাইরাল হয়ে গেল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অনেকে লিখলেন—
“পুরনো ঐতিহ্যের নতুন গল্প!”
“এটা একেবারে সিনেমার দৃশ্যের মতো।”
“এই যুগেও কেউ এভাবে বিয়ে করতে পারে!”
শেষ কথা
যখন গাড়িটা বাড়ির উঠোনে এসে থামল, তখন জীবনানন্দ একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন সত্যি হল তাঁর। নববধূ নিবেদিতার হাত ধরে বললেন,
“এই গরুর গাড়ি শুধু আমাদের বাহন নয়, এটা আমাদের শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার গল্প।”
গ্রামের বাতাসে তখন শুভেচ্ছার গুঞ্জন। কিছু পুরনো জিনিস হারিয়ে গেলেও, কিছু জিনিস নতুন রঙে ফিরে আসেই—জীবনানন্দ-নিবেদিতার এই যাত্রাই তার প্রমাণ!
বিঃদ্রঃ – আউশগ্রামের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।
|| সমাপ্ত ||