হাওড়া ময়দানের শৈলেন মান্না স্টেডিয়ামের সামনে সেই সকাল থেকেই ভিড় জমেছে। এক কালো ব্যাগ ঘিরে উত্তেজনা চরমে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করছিলেন, স্কুলের বাচ্চারা হাসতে খেলতে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকছিল। কিন্তু কেউই ভাবেনি, সেই নিঃশব্দে পড়ে থাকা ব্যাগ একটা রহস্যের সূত্র হতে চলেছে।
সকাল দশটার দিকে প্রথম সন্দেহ শুরু হয়। স্থানীয় এক চা বিক্রেতা, মনোহর, জানান, “সকাল সাতটা নাগাদ যখন চা বিক্রি শুরু করলাম, তখনই ব্যাগটা পড়ে ছিল। কিন্তু তখন তো ভাবিনি, এটা নিয়ে এত হৈচৈ হবে।”
ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ এসে ব্যাগটি ঘিরে ফেলে। একদল লোক দূর থেকে সবকিছু দেখতে দাঁড়িয়ে গেল। কারও মুখে উদ্বেগ, কারও মুখে কৌতূহল। “ব্যাগে বোমা থাকতে পারে,” কেউ ফিসফিস করে বলল।
কিন্তু প্রশ্ন ছিল, ব্যাগটা কে রেখে গেল?
অদ্ভুত সূত্র
তদন্তকারীরা প্রথমেই কাছাকাছি দোকানগুলোর মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। মনোহর বললেন, “সকাল থেকে তো আমি কাউকে সন্দেহজনকভাবে ঘুরতে দেখিনি। তবে কাল রাতে খুব একটা ভিড় ছিল না।”
পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করল। ফুটেজে দেখা গেল, রাত প্রায় বারোটার দিকে এক ছায়ামূর্তি স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। লোকটি কালো রঙের জামা এবং মাথায় টুপি পরে ছিল। সে খুব সাবধানে ব্যাগটি রেখে দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
“লোকটা কি পেশাদার?” তদন্তকারী অফিসার দত্ত তার দলকে বললেন। তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, এটা এমন কারও কাজ হতে পারে, যে কিছু গোপন করতে চাইছে।
ব্যাগের ভেতর থেকে…
ব্যাগটি খোলার সময় এলাকাবাসীর শ্বাস আটকে গিয়েছিল। কেউ কেউ মোবাইলে ঘটনাটি রেকর্ড করছিলেন। কিন্তু যখন ব্যাগটি খোলা হল, ভিতরে যা ছিল, তা আরও বেশি রহস্যময়।
একটি পুরোনো নোটবুক, কয়েকটি ছবি, আর একটি ধুলো মাখা চিঠি। নোটবুকের ভেতর খসখসে হাতে লেখা কয়েকটি বাক্য:
“আমার নাম জানার দরকার নেই। আমি যা করেছি, সেটা শুধুই আমার প্রিয়জনের জন্য। আমি চলে যাচ্ছি, তবে সত্যিটা কেউ না কেউ একদিন জানবেই।”
ছবিগুলোতে একটি মেয়েকে দেখা যায়—সে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকটি ছবিতে তার পাশে একজন যুবকও আছে। পুলিশ বুঝতে পারল, এরা হয়তো একে অপরকে চিনত।
চিঠির রহস্য
চিঠিতে আরও লেখা ছিল, “যখন সময় আসবে, এই নোটবুক তোমাদের সব বলবে। আমি যা করতে চেয়েছিলাম, সেটা সফল হয়নি। কিন্তু সত্যিটা তোমরা বের করবেই।”
নোটবুকের শেষ পাতায় একটি ঠিকানা লেখা ছিল—কলকাতার একটি পুরোনো বইয়ের দোকানের।
পুলিশের তদন্ত এগোচ্ছে
তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে পুলিশ খুব সতর্ক। ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানের মালিক এক বৃদ্ধ, হরিহরণ দাস। তিনি জানান, “এ নোটবুক আমি চিনতে পারছি। বছরখানেক আগে এক যুবক এটা কিনেছিল। ছেলেটা খুব চুপচাপ ছিল। বেশিরভাগ সময় বইয়ের ভিতরে মুখ গুঁজে থাকত।”
হরিহরণের কথা শুনে পুলিশ বুঝল, যুবকটি হয়তো এই পুরো ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু কেন সে হাওড়ার মতো ব্যস্ত এলাকায় এমন রহস্যময় ব্যাগ রেখে গেল?
শেষ ধাঁধা
অবশেষে নোটবুকের পাতায় আরও কিছু কোড পাওয়া গেল, যা সমাধান করা সহজ ছিল না। পুলিশ কেসটি খোলাসা করার জন্য সাইবার সেলের সাহায্য নেয়। কোডের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট বার্তা পাওয়া গেল, যা বলছে, “আমি মিথ্যা বলেছি। আমার প্রিয়জন এখন আর জীবিত নয়। কিন্তু তার জন্য আমি আমার জীবনও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।”
এই ঘটনাটি হয়তো এক ট্র্যাজেডির গল্প, যেখানে ভালোবাসা আর অপরাধ একসূত্রে গাঁথা। তবে ব্যাগের এই রহস্য এখনও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। হাওড়া ময়দান আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে, কিন্তু ব্যাগের ঘটনাটি মানুষের মনে থেকে গেছে—একটি প্রশ্নের মতো, যার উত্তর পাওয়া বাকি।
“সত্যটা কি আসলেই কেউ জানবে?” স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে মনোহর চা বিক্রি করতে করতে ভাবতে থাকে।
বিঃ দ্রঃ – শৈলেন মান্না স্টেডিয়ামের কাহিনী অবলম্বনে গল্পটি লিখিত।
|| সমাপ্ত ||
________