HomeStory of WestbengalBardhaman: পেট্রোল গ্লাস

Bardhaman: পেট্রোল গ্লাস

বর্ধমানের রামপুরহাটের ঘটনা

সন্ধ্যা নেমেছে গ্রামে। আকাশের লালচে আভা মিশে গেছে গাছপালার ছায়ায়। ছোট্ট সাদিয়া বসে আছে তার দুই দাদার সঙ্গে। তাদের সামনে রাখা একটি থালা ভর্তি গরম খিচুড়ি। আজ স্কুল থেকে মিড ডে মিলের খাবার আনা হয়েছে, তাই বেশ আনন্দ করেই খাচ্ছে সবাই। সাদিয়া যদিও মাত্র ৯ মাসের, কিন্তু সে ঠিক দাদাদের মতো বড় হতে চায়। খিচুড়ির ছোট ছোট গরম মাখা দানাগুলো সে এক হাতে তুলে মুখে পুরছে।

হঠাৎ তার গলা শুকিয়ে আসাতে লাগল। ছোট ছোট হাত নেড়ে সে ইশারায় জানাল, জল চাই। সাত বছরের দাদাটি উঠে গিয়ে পাশে রাখা একটি বোতল নিয়ে এল। বোতলটি একবার দেখল, তারপর ঢাকনা খুলে বোনের মুখের কাছে ধরল। বোতলের তরলটি ধীরে ধীরে সাদিয়ার গলায় নামতে শুরু করল। কিন্তু…!

মুহূর্তের মধ্যে সাদিয়ার মুখ বিকৃত হয়ে গেল। সে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল, তার ছোট্ট শরীরটা কাঁপতে লাগল, চোখ বড় বড় হয়ে গেল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে!

“মা! মা! সাদিয়া ঠিক নেই!”—চিৎকার করে উঠল দাদাটি।

বাড়ির সকলে ছুটে এল। মা সাদিয়াকে তুলে নিতেই তার ছোট্ট শরীরটা নিথর হয়ে এল। সবাই চিৎকার করছে, বাবার হাত কাঁপছে, দাদারা ভয়ে এক কোণে সিঁটিয়ে আছে। বোতলটা পড়ে আছে মাটিতে, তার গা থেকে এখনো তীব্র গন্ধ ছড়াচ্ছে।

পেট্রোল!

জল ভেবে তারা বোতলে রাখা পেট্রোল খাইয়ে দিয়েছে!

অন্য কিছু ভাবার সময় নেই। বাবা সাদিয়াকে কোলে তুলে পাগলের মতো ছুটলেন হাসপাতালে। পথে লোকজন প্রশ্ন করছিল, “কি হয়েছে?” কিন্তু তিনি কারো দিকে না তাকিয়ে শুধু দৌড়াচ্ছিলেন।

রামপুরহাট হাসপাতালের ডাক্তার বললেন, “শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কাছে যা সামান্য চিকিৎসা আছে, তা দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। দ্রুত বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যান।”

বাবা আর দেরি করলেন না। সারা রাত হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করলেন মা-বাবা। একবার শুধু মেয়ের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে না তো, হাতটা একটু নড়ছে কি না, তা দেখতে ঘন ঘন জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

রাত দেড়টা। ডাক্তার এসে ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন।

সব শেষ হয়ে গেল। ছোট্ট সাদিয়া আর নেই।

হাসপাতালের করিডোর ভেসে গেল কান্নার স্রোতে। মা পাগলের মতো মেয়ের নিথর দেহটা জড়িয়ে ধরলেন, বাবা ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন ছাদের দিকে। কীভাবে একটি ভুল বোতল তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মানুষটাকে কেড়ে নিল, তা তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

একটি ভুল… একটি বোতল… একটি জীবন…

সাদিয়ার গল্প এখানেই শেষ, কিন্তু তার মা-বাবার জন্য এ গল্পের শেষ নেই। কারণ, ভুল বোতলের বিষ শুধুমাত্র এক শিশুর জীবন নয়, একটি পুরো পরিবারের স্বপ্ন, ভালোবাসা, এবং সুখকে এক নিমেষে গ্রাস করে নিল।

বিঃদ্রঃ – বর্ধমানের রামপুরহাটের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন