চুঁচুড়া বুনোকালিতলার বালিপুকুরে সেদিন সকাল থেকেই হাঁসফাঁস অবস্থা। গ্রামের মোড়ে দাঁড়িয়ে চায়ের দোকানের মালিক ধীরাজের মুখে বারবার শোনা যাচ্ছিল, “আজ কিন্তু ঐতিহাসিক দিন! রাজা পাঁঠার জন্মদিন!” শুনে পাশের গ্রাম থেকে আসা এক চাষী বিস্ময়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললেন, “রাজা আবার পাঁঠা হয় কীভাবে?”
ধীরাজ একগাল হাসি হেসে গল্পটা খুলে বলল। বাবলু ওঁরাওয়ের বাড়ি শীতের রাতে একটি বলির পাঁঠা এসে পড়েছিল। নিঃসন্তান বাবলু আর সেটিকে বলির ছুরি ধরতে পারেননি। তারপর থেকে রাজা নাম দিয়ে তাকে পোষ মানিয়েছেন। আজ সেই রাজা এক বছরের পূর্ণজন্মদিনে ঢেঁড়া পিটিয়ে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। বাবলু বলছেন, “মানুষ যেমন কুকুর, বিড়ালের জন্মদিন করে, আমরাও করব, কিন্তু আমরা একটু অন্যরকম। রাজা আমাদের কাছে সন্তানসমান।”
সকাল থেকেই বাবলুর বাড়িতে দারুণ ভিড়। বন্ধুরা সকলে মিলেই আয়োজনের দিকটা দেখছিল। সঞ্জীব ঘোষ আর রতন পাসোয়ান মিলে কেকের দোকানে গিয়ে ব্ল্যাক-হোয়াইট ফরেস্ট কেক নিয়ে এলেন। কেকের উপর বড় বড় অক্ষরে লেখা, “হ্যাপি বার্থ ডে রাজা!”
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু। বাবলু নিজের বেতন থেকে কিনে এনেছেন লাল রঙের জামা। রাজা যে কতটা বিরক্ত, তা তার মুখের অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। লাল জামাটা গায়ে চাপানো মানেই গায়ে চুলকানি!
কিন্তু রাজা খুব ভালো মতোই ধৈর্য ধরে পুরোটা সামলাল। টেবিলের সামনে এনে তাকে সাজানো হল। সামনের দু’পা টেবিলে রেখে কেক কাটার দায়িত্ব দেয়া হল তাকে। বন্ধুরা চিৎকার করছে, “হ্যাপি বার্থ ডে রাজা!” পাশে দাঁড়ানো এক শিশু বিস্ময়ে বলল, “রাজা কি এবার লোকসভা ভোটেও দাঁড়াবে?”
রাজা কেক কাটার পরের মুহূর্তেই লোভ সামলাতে না পেরে এক কামড়ে এক-চতুর্থাংশ কেক গিলে ফেলল। অতিথিরা তখন হাততালি দিতে দিতে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছেন। একজন বললেন, “কেক যদি নিজেই খেয়ে ফেলে, অতিথির জন্য কি থাকবে?”
তারপর শুরু হল ভোজ। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, চিপস, মুরগি মাংস, চাটনি, পাঁপড় আর মিষ্টি। অতিথিরা একদিকে খাবার খাচ্ছেন, অন্যদিকে রাজা ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে কেকের শেষ টুকরো খুঁজছে।
উৎসবের মধ্যেই রতন মজা করে বললেন, “আগামী বছর রাজার বিয়ের আয়োজন করতে হবে। আমাদের পাঁঠারও সংসার হওয়া উচিত!” বাবলু সবার সামনে গম্ভীর মুখে ঘোষণা করলেন, “হ্যাঁ, রাজাকে ভালো ঘরের বউ খুঁজে দেব। সবার আগে মেনু ঠিক করতে হবে। কনের বাবা-মা রাজি হলে, বিয়েতে বিরিয়ানি থাকবে!”
এই কথা শুনে গ্রামের সবাই হেসে কুটিপাটি। রাজা তখনও নতুন জামায় গা চুলকাতে চুলকাতে কেকের শেষ টুকরোটার দিকে তাকিয়ে রইল।
পাঁঠা রাজা, তুই মহান!
বিঃ দ্রঃ – চুঁচুড়া বুনোকালিতলা বালিপুকুরের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।
|| সমাপ্ত ||
______