HomeStory of WestbengalChinsurah: চুঁচুড়ার প্রতিবাদী বসন্ত

Chinsurah: চুঁচুড়ার প্রতিবাদী বসন্ত

নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার রাত

চুঁচুড়া শহরের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতায়। রাত্রি নেমে এসেছে, কিন্তু শহরের পরিচিত আলো, রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট কিংবা উজ্জ্বল হাইমাস্টগুলোর কোথাও কোনো অস্তিত্ব নেই। সেই অন্ধকার যেন শহরের মানুষদের মনে এক অচেনা শঙ্কার জন্ম দিচ্ছিল।

লিলির দিনটা মোটেই ভালো কাটেনি। স্বামীর অসুস্থ শরীরের জন্য মেডিসিন কিনতে গিয়ে শুনেছিল, দোকানে কার্ড নেওয়া বন্ধ, নগদ দিতে হবে। টাকার অবস্থা এমনিতেই নড়বড়ে। ছেলে স্কুল থেকে ফিরে বলেছিল, আগামীকাল স্কুলের ফি না দিলে ক্লাসে ঢুকতে দেবে না। আর সন্ধ্যা হতেই, পুরো পাড়া ডুবে গেল অন্ধকারে। এই অন্ধকার শুধু বিদ্যুতের নয়, যেন শহরের কর্মীদের অন্তরের হতাশার প্রতিচ্ছবি।

বসন্ত ঘোষাল, পুরসভার অস্থায়ী কর্মী, নিজের চার বছরের মেয়ের জন্য দুধ কিনতে পারেননি। স্ত্রী রুমাকে কথা দিয়েছিলেন, এই মাসের বেতন পেলেই দুধের টাকা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর রাখা হলো না।

সোমবার দুপুরে কর্মীদের ধৈর্য ভাঙল। বসন্ত আর তার সহকর্মীরা চেয়ারম্যানের অফিসের সামনে জড়ো হলেন। “আর পারছি না স্যার। কাজ করতে হলে পেটেও তো কিছু থাকতে হবে। ঘরে বাচ্চারা না খেয়ে কাঁদছে।” বসন্তের গলা কাঁপছিল, কিন্তু মুখের দৃঢ়তাটা স্পষ্ট।

চেয়ারম্যান প্রথমে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ক্ষোভ এতটাই গভীর যে আশ্বাসে জল ঢালা যায় না। ঘেরাও চলতেই থাকল। “আপনারা কাজ বন্ধ করলে পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে যাবে,” চেয়ারম্যান বললেন।
“অন্ধকার তো আমরা এমনিই দেখছি, স্যার। এবার শহরও সেটা বুঝুক,” বলে উঠলেন এক কর্মী।

রাত্রি গভীর হলো। চুঁচুড়ার রাস্তায় হাঁটছিলেন বিধায়ক অসিত মজুমদার। বাতিগুলো নিভে আছে। রাস্তায় হাঁটার সময় তার নিজের গাড়ির আলো ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছিল না। হঠাৎই মুখোমুখি হলেন বসন্তের সঙ্গে।
“কী হলো? এমন অন্ধকার কেন?”
“আপনিই তো বলুন, স্যার। বেতন ছাড়া মানুষ কতদিন কাজ করবে?” বসন্তের কণ্ঠস্বর ছিল আক্ষেপে ভরা।

এতক্ষণে বিধায়কের চেতনাটা একটু নড়ল। এই সমস্যা শুধু একটি রাতের নয়। দিনের পর দিন জমে থাকা অর্থনৈতিক সংকট আর কর্মীদের হতাশা একসঙ্গে ফুটে উঠেছে।

পরের দিন সকালে পুরসভায় জরুরি বৈঠক ডাকা হলো। চেয়ারম্যান, বিধায়ক, আর শহরের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি একত্রিত হলেন। কীভাবে শহরের আয় বাড়ানো যায়, সেই নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হলো। তবে সবচেয়ে বড় আশ্বাসের কথা ছিল এই যে, বিকেলের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া হবে।

শহরের অন্ধকার যখন কাটল, তখন বসন্ত আর তার সহকর্মীরা লাইট পোস্টগুলো একে একে জ্বালাচ্ছিলেন। আলো ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যেন একটা নতুন আশা জেগে উঠল চুঁচুড়ার মানুষের মনে।

তবে, বসন্ত জানতেন, এই আলো যতটা শহরের জন্য, ততটাই তাদের নিজেদের লড়াইয়ের ফল। আজকের রাতটা শুধু একটা সাধারণ রাত নয়, এটা ছিল শহরকে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার রাত।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন