HomeStory of Westbengalkalna police: গরুচোরের গ্যাং: কালনার রাতে ফাঁদে পড়ার গল্প

kalna police: গরুচোরের গ্যাং: কালনার রাতে ফাঁদে পড়ার গল্প

উঠে আসে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা

গভীর রাত। কালনার বৈদ্যপুর গ্যারেজ মোড়ে ছায়া ঢাকা রাস্তা নিস্তব্ধ। অন্ধকারে দূরে কোথাও কুকুরের চিৎকার, আর মাঝে মাঝে ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। কিন্তু পুলিশ জানত, এই নীরব রাতেই বড় কিছু ঘটতে চলেছে। কালনা থানার গোয়েন্দা বিভাগ দিনের পর দিন খবর পাচ্ছিল, একটি চৌকস গরুচোরদের দল এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে। তারা শুধু গরু চুরি করেই ক্ষান্ত নয়, শিকারের পন্থা এমন নিখুঁত যে স্থানীয় বাসিন্দারাও টের পাচ্ছিল না।

গ্যাংয়ের পরিকল্পনা

সেদিন রাতেও ৮ জনের দল তাদের কাজে নেমেছিল। হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এ দলটি পিকআপ ভ্যানে করে বেরিয়েছিল। তাদের টার্গেট ছিল কালনার একটি বড় ফার্মহাউস। সেখানকার মালিকের দুটি দামি গরু—একটি গর্ভবতী, আরেকটি পুরস্কারপ্রাপ্ত।

গ্যাংয়ের নেতা, ৫৩ বছরের রউফ আলি, গার্ড ডগগুলোকে চুপ করানোর জন্য বিশেষ রসালো মাংস এনেছিল। এই মাংসে মিশানো ছিল ঘুমের ওষুধ। রউফ আলি ইতিমধ্যে নদিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং হুগলির চুরির ঘটনার পেছনে ছিলেন। তার সঙ্গীরা ছিল কমবয়সি, তাদের কাজ ছিল দ্রুত চুরি করা এবং পিকআপে লোড দেওয়া।

পুলিশের ফাঁদ

কিন্তু এইবার সবকিছু তাদের পরিকল্পনা মতো চলল না। পুলিশ আগে থেকেই খবর পেয়ে ফাঁদ পেতে বসে ছিল। বৈদ্যপুর মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের মোতায়েন করা হয়েছিল। থানার অফিসার অরিন্দম মিত্র একটি কালো গাড়িতে গোপনে নজর রাখছিলেন।

ঘড়ির কাঁটা রাত ২টা ছুঁইছুঁই। দলটি যখন গরুগুলোকে গাড়িতে তুলছিল, তখনই পাশের একটি সিভিক ভলান্টিয়ার হেডফোনে খবর পাঠাল, “অপারেশন শুরু।” সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ গাড়ি নিয়ে ধাওয়া শুরু করে।

পালানোর চেষ্টা

চোরের দল দ্রুত পিকআপ নিয়ে পালাতে শুরু করে। একসময় তারা রাস্তা বদলে একটি সরু গলিতে ঢুকে যায়। পুলিশও তাদের পিছু নেয়। একদিকে সাইরেনের চিৎকার, আরেকদিকে পিকআপের ইঞ্জিনের গর্জন। গাড়ির চালক, ২২ বছরের শামীম, ভীষণ দক্ষ হলেও পুলিশের ফাঁদ এড়াতে পারেনি।

তারা যখন পালানোর শেষ চেষ্টা করছিল, হঠাৎই সামনে রাস্তার মোড়ে পুলিশের আরেকটি গাড়ি দেখা গেল। ফাঁদ সম্পূর্ণ। তাদের গাড়ি দাঁড় করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শামীম বেপরোয়া চালক, ব্রেক না করে গাড়ি পুলিশের দিকে চালিয়ে দেয়। শেষ মুহূর্তে পুলিশ দ্রুত সরে গিয়ে বাঁচে। পিকআপটি ব্রিজের ধারে এসে একরকম দাঁড়িয়ে পড়ে।

ধরা পড়া ও স্বীকারোক্তি

চোরের দল বুঝতে পারে, পালানো আর সম্ভব নয়। তারা গাড়ি ফেলে পাশের মাঠে ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের চারপাশ ঘিরে ফেলার কৌশলে তারা আটকা পড়ে। একজন ধরা পড়ার সময় বলে উঠল, “আমরা শুধু নির্দেশ পালন করি! মাস্টারমাইন্ডকে ধরুন।”

ধৃতদের থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। একে একে উঠে আসে রউফ আলির ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। এ দল শুধু গরু চুরি করত না, চুরি করা গরু গোপনে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের একটি চক্রের কাছে বিক্রি করত। তাদের এই কারবার বহুদিন ধরেই চলছে।

পুলিশ এখন জানার চেষ্টা শুরু করে, এদের সঙ্গে আর কারা যুক্ত। তদন্তে স্পষ্ট, গ্যাংয়ের বড় পরিকল্পনা ছিল এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চুরি চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু এবার তাদের অপরাধ থামানো গেল।

কালনার রাতের এই অভিযান যেন গরুচুরির চক্রের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেল—কতই পরিকল্পনা হোক, সত্যের কাছে সব হার মেনে নেয়।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন