HomeStory of WestbengalCyclone of Bay of Bengal: বাদলা শীতের হুঙ্কার

Cyclone of Bay of Bengal: বাদলা শীতের হুঙ্কার

স্বপ্ন ঝরাপাতার মতো পড়ে আছে জলজমিতে

চন্দ্রকোনা গ্রামের কৃষক শ্যামল চক্রবর্তী সকাল থেকেই উদ্বিগ্ন। আকাশের মুখ ভার, ভোররাত থেকেই শুরু হয়েছে টিপটিপ বৃষ্টি। তিনি বারবার ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে খেতের দিকে তাকাচ্ছেন। এই বছর অনেক কষ্টে জমি প্রস্তুত করে আলু লাগিয়েছিলেন। ধার করে কিনতে হয়েছিল সার আর বীজ। শীতের এই মরসুমে ভাল ফসল তোলার আশায় তাঁর সমস্ত পরিশ্রম এখন মেঘের সুরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

শ্যামলের স্ত্রী, মালতী, এক মগ চা নিয়ে এসে বললেন, “খালি চিন্তা করলে হবে? যা হওয়ার হবে। একবার খেতে গিয়ে দেখে এসো।”

শ্যামল মাথা নিচু করে বললেন, “চিন্তা তো করতেই হবে। এই খেতটাই তো আমাদের সবকিছু। যদি সব নষ্ট হয়ে যায়, তবে কেমন করে চলবে?”

বিকেলের দিকে বৃষ্টির দাপট আরও বাড়ল। শ্যামল খেতে গেলেন। চারপাশে জল থইথই করছে। মাটি থেকে আলু চারাগুলো প্রায় উপড়ে এসেছে। শ্যামল হাঁটু গেড়ে বসে চারাগুলোর গোড়ায় হাত রাখলেন। যেন মাটি আর গাছের সঙ্গে কথা বলছেন, “তোমরা একটু লড়ো। এই বৃষ্টি থামলেই তোমাদের আবার ঠিক করে লাগিয়ে দেব। বাঁচো, শুধু বাঁচো।”

কিন্তু প্রকৃতি শ্যামলের কথা শুনল না। রাতের দিকে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করল। খড়ের চালা থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে। গ্রামে মাইকে ঘোষণা চলল, “সবাই সাবধান থাকুন! নদীর জল বাড়ছে। সাইক্লোনের প্রভাব এদিকেও পড়তে পারে।”

পরদিন সকালে গ্রামে শ্মশানের মতো নীরবতা। শ্যামল খেতে গিয়ে দেখলেন, সমস্ত আলুর ক্ষেত জলমগ্ন। কিছুই আর করার নেই। পাড়ার আরও কিছু কৃষক তাঁর সঙ্গে এসে দাঁড়ালেন। মেঘলা আকাশের নিচে সকলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কারোর মুখে কোনো কথা নেই, শুধু চোখে চোখে কথা হচ্ছে। সবার দুঃখ যেন এক সুতোয় বাঁধা।

শ্যামল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। তাঁর মনে পড়ল, ছেলের পড়াশোনার খরচ দেওয়ার জন্য এই ফসলের ওপরেই ভরসা ছিল। বাজার থেকে দ্বিগুণ দামে সার কিনে জমি সাজিয়েছিলেন। মালতী বলেছিল, “এবার আলু ভালো হবে। বড় মুনাফা হবে।” এখন সেই স্বপ্ন ঝরাপাতার মতো পড়ে আছে জলজমিতে।

শ্যামল খালি হাতে ফিরে এসে মাটিতে বসে পড়লেন। মালতী তাঁর পাশে এসে বসলেন। শান্ত গলায় বললেন, “বৃষ্টি আমাদের যতবার কাঁদিয়েছে, ততবার তো মাটিও আমাদের দিয়েছে। আবার শুরু করতে হবে।”

শ্যামল স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তাঁর চোখে কৃতজ্ঞতা ঝলসে উঠল। সত্যিই তো, মাটি তাঁকে যতবার ভেঙেছে, ততবারই শক্তিও দিয়েছে।

শ্যামল উঠলেন। পাড়ার কৃষকদের একত্রিত করে বললেন, “আমাদের একসঙ্গে কিছু করতে হবে। সরকার বা কোনো সংস্থার সাহায্য পেলে হয়তো আবার নতুন করে শুরু করা যাবে। মাটি ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”

বৃষ্টি থেমেছে। আকাশে একটু আলো ফুটেছে। আশার সুর যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে। শ্যামল জানেন, সামনের পথ কঠিন। কিন্তু লড়াইয়ের জন্য মাটির প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং গ্রামবাসীদের ঐক্যই যথেষ্ট।

গ্রামের আকাশে তখন এক টুকরো রোদ। সাইক্লোনের সুর মিলিয়ে যাচ্ছে, আর শ্যামলের মনে নতুন সুর বেজে উঠছে—লড়াইয়ের, বেঁচে থাকার।

|| সমাপ্ত ||

_______

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন