হৃদয় মার্ডি, কুমারগঞ্জের এক অল্পবয়সী নির্মাণ শ্রমিক। প্রতিদিনের পরিশ্রম আর পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ করেই এক দিন তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে আসে অন্ধকার। তীব্র পেটের ব্যথা তাঁকে শয্যাশায়ী করে তোলে। গ্রামের হাসপাতালে কিছু পরীক্ষা করার পর তাঁকে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসক দেবাশিস বিশ্বাস এবং জগবন্ধু মুর্মু প্রথমেই বুঝতে পারেন, হৃদয়ের অবস্থা গুরুতর। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায়, তাঁর খাদ্যনালীতে ফুটো রয়েছে—a rare and dangerous condition। সাধারণত এমন সমস্যার জন্য বড় বড় মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু দেবাশিস এবং জগবন্ধু স্থির করেন, হৃদয়কে তাঁরা বাঁচাবেন এবং এখানেই ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করবেন।
রাত নেমে এলো। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে তখন প্রস্তুতি চলছে। ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং উন্নত পদ্ধতি, তা দিয়ে অপারেশনের দায়িত্ব নিলেন তাঁরা। সাধারণত এই পদ্ধতিতে রোগীর পেট না কেটে ছোট ফুটোর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজ করা হয়। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁরা খাদ্যনালীর ফুটো মেরামত করতে সক্ষম হন। অপারেশনের পর হৃদয়কে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
প্রথম কয়েক দিন কাটল নিঃশ্বাস আটকে থাকা মুহূর্তের মতো। হৃদয় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। তাঁকে পর্যাপ্ত তরল খাবার এবং পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালের সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সাত দিনের মধ্যেই হৃদয় হাঁটাচলা করতে শুরু করেন।
এদিন দুপুরে হাসপাতালের বেড ছেড়ে বাড়ির পথে পা বাড়ানোর সময় হৃদয়ের চোখে ছিল কৃতজ্ঞতার অশ্রু। তিনি জানতেন, এই অস্ত্রোপচার শুধু তাঁর জীবনই নয়, তাঁর পরিবারেরও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তাঁর মা-বাবার মুখে ফিরে এসেছে স্বস্তির হাসি। হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মীরা জানতেন, এই সাফল্য শুধু একটি অস্ত্রোপচারের নয়, তাঁদের জেলা হাসপাতালের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এই ঘটনা শুধুমাত্র এক জন রোগীর জীবন বাঁচানোর গল্প নয়, এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনার দিশা দেখানোর একটি উদাহরণ। হৃদয় মার্ডি এবং বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের এই সাফল্যের গল্প বলে দেয়, কোথাও না কোথাও আশার আলো জ্বলে থাকে, যা অন্ধকারেও পথ দেখায়।
বিঃ দ্রঃ – বালুরঘাটের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।
|| সমাপ্ত ||
________