HomeStory of WestbengalDhupguri: সুপারি গাছের চোর

Dhupguri: সুপারি গাছের চোর

মাধবীর কান্না থামছিল না

ধূপগুড়ির মাগুরমারি গ্রামে সেদিন সকালে ঝকঝকে রোদ ছিল। জীবন রায়ের বাড়িটা সুপারি গাছ ঘেরা, একদম গ্রামের সাদামাটা বাড়ি। স্ত্রী মাধবী ব্যস্ত ছিলেন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য। জীবনের ছোটবোন অসুস্থ, তাই সকাল থেকেই মনটা একটু অস্থির ছিল। সিদ্ধান্ত হলো, দুজনেই যাবেন বোনকে দেখতে।

সকাল দশটা। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে দিয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে রওনা দিলেন বোনের বাড়ি। বাড়ি তখন ফাঁকা। গাছপালা ঘেরা শান্ত পরিবেশে বাড়ি যেন শূন্যতার চাদরে ঢেকে গেল।

কিন্তু জীবনের ভাবনাতেও আসেনি যে কেউ তাদের এই মুহূর্তের অনুপস্থিতিকে নজরে রাখছে। দূর থেকে দুই জোড়া চোখ তাদের সব গতিবিধি খেয়াল করছিল। চোরের দল ঠিক করেছিল, আজই সুযোগ।

দুঃসাহসিক চুরি

যেই তারা বেরোলেন, সেই মুহূর্তে চোরেরা তৈরি। সুপারি গাছ বেয়ে প্রথম চোর বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। দ্বিতীয়জন দেওয়াল টপকে দাঁড়ালো বারান্দায়। দুজনে মিলে কয়েক মিনিটেই তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঘরের আলমারির তালা খুলে সোনা আর নগদ টাকা বের করতে তাদের বেশি সময় লাগেনি।

মাধবীর শাশুড়ির দেওয়া হার, মায়ের দেওয়া বালা— সবই ছিল তার গয়নার বাক্সে। পাঁচ ভরি সোনা আর নগদ এক লক্ষ টাকা, সব প্যাকেটবন্দি করে এক চোর বারান্দায় উঠে এলো। অন্যজন দেওয়াল টপকানোর পর সুপারি গাছ বেয়ে নিচে নেমে গেল।

যেন কিছুই ঘটেনি, এমন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তারা গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল।

অবাক হওয়ার পালা

বাড়ি ফিরে জীবন দেখলেন, ঘরের তালা ভাঙা। পা থমকে গেল। মাধবী ভয় পেয়ে চিৎকার করলেন, “ওরে! ঘরের তালা কে ভাঙল?”

দুজনেই ছুটে ঘরে ঢুকে দেখলেন আলমারি ফাঁকা। মাধবীর শাশুড়ি আর মায়ের দেওয়া গয়নার বাক্স হাওয়া। নগদ টাকাও নেই। এক মুহূর্তের জন্য পুরো পৃথিবীটা যেন থেমে গেল।

মাধবী কান্নায় ভেঙে পড়লেন। “মায়ের দেওয়া হারটা… শাশুড়ির দেওয়া বালা… সব নিয়ে গেল!” কান্নায় তার গলা ফেটে যাচ্ছিল। জীবন চেষ্টা করছিলেন মাথা ঠান্ডা রাখতে। কিন্তু তারও চোখ ফেটে জল আসতে চাইছিল।

গ্রামজুড়ে চাঞ্চল্য

বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় জমে গেল। সব শুনে গ্রামের লোকেরা বিস্মিত। “দিনের বেলা, তাও এমন দুঃসাহস!” একজন বলল।

“চোরেরা ফলো করেছে তোকে,” একজন বয়স্ক লোক বললেন। জীবনের মনেও সন্দেহ হলো, হয়তো তাদের প্রতিটা গতিবিধি নজরে রেখেছিল চোরেরা।

পুলিশে খবর দেওয়া হলো। কিন্তু ততক্ষণে চোরের দল অনেক দূরে। পুলিশ বলল, “দেখি, আশেপাশে কেউ কিছু সন্দেহজনক দেখেছে কিনা।”

মাধবীর প্রতিজ্ঞা

কিছুদিন কেটে গেল, কিন্তু চোরের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। হারানো টাকার জন্য জীবন খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। আর মাধবীর কান্না থামছিল না। কিন্তু সেই ঘটনার পর থেকে মাধবী আরেকটা জিনিস ঠিক করে ফেললেন— আর কখনোই নিজের বা পরিবারের সামান্য তথ্যও কারো কাছে ফাঁস করবেন না। বাড়ি ফাঁকা রাখলে কখনও কারো নজরে পড়বে না।

গ্রামের চুরি-চাঞ্চল্য থেমে গেলেও জীবনের মনে একটা প্রশ্ন থেকে গেল— “চোরেরা যদি এতটা পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারে, তবে আমরা কেন আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে এমন অসতর্ক?”

ধূপগুড়ির চুরির ঘটনায় সতর্কতা আর সচেতনতার নতুন পাঠ নিয়ে ফিরল জীবন আর তার পরিবার।

বিঃদ্রঃ – ধুপগুড়ির ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন