জবলপুর শহরের সকালটা চিরকালই চঞ্চল। রাস্তাঘাটের কোলাহলে মিশে থাকে মানুষের জীবনের নানা গল্প। কিন্তু সেই দিনের গল্পটা ছিল অন্যরকম। শীতের মৃদু হাওয়ায় এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন বাস স্টপে। ভিড়ে ঠাসা বাসগুলো তার পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে, কিন্তু কেউই থামছে না। মহিলার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। হঠাৎ এক ই-রিকশা এসে থামল তার সামনে। চালক মাথা বের করে নম্র গলায় বললেন, “ম্যাডাম, কোথায় যাবেন? আসুন, বসুন।”
মহিলা প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও ই-রিকশায় উঠে বসেন। তিনি ভাবছিলেন কত ভাড়া দিতে হবে, কারণ সঙ্গে খুব বেশি টাকা ছিল না। কিছুক্ষণ পর তাঁর নজর পড়ল চালকের আসনের পেছনে ঝোলানো একটি নোটিসে। সেখানে বড় অক্ষরে লেখা ছিল, “অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য কোনও ভাড়া নয়।”
মহিলা চমকে গেলেন। এমন কথা আগে কখনো শোনেননি। তিনি চালককে প্রশ্ন করলেন, “আপনি কেন এটা করছেন? ভাড়া নিলে তো আপনাদেরই সুবিধা হত।”
চালক হাসলেন। তারপর বললেন, “আমার মা যখন আমাকে পৃথিবীতে আনতে যাচ্ছিলেন, তখন খুব কষ্টে ছিলেন। বাবা কাজের জন্য শহরের বাইরে, আর মাকে একা যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। রাস্তায় কেউ সাহায্য করেনি। অনেক কষ্টে তিনি গন্তব্যে পৌঁছেছিলেন। মায়ের সেই কষ্ট আমি কখনো ভুলতে পারিনি। তখন থেকেই ঠিক করেছিলাম, যদি কোনো অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে দেখি, আমি যতটুকু পারি, সাহায্য করব।”
মহিলার চোখে জল চলে এল। তিনি মুগ্ধ হয়ে বললেন, “আপনার এই মানসিকতা সমাজের জন্য শিক্ষণীয়। আপনি জানেন কি, আপনি শুধু আমারই নয়, আরও অনেকের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন।”
চালক লজ্জিতভাবে হেসে বললেন, “আমি তো খুব সাধারণ মানুষ। কিন্তু যদি আমার এই ছোট কাজ কাউকে উপকারে লাগে, তাহলে তাতেই আমি খুশি।”
এই কথোপকথন চলতে চলতেই গন্তব্য এসে গেল। মহিলা নামার সময় চালক তাঁকে বললেন, “যদি কখনও আপনাকে জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যেতে হয়, এই নম্বরে ফোন করবেন। আমি এসে পৌঁছে দেব।”
সেদিন ই-রিকশা চালকের মানবিকতার এই ছোট গল্পটি মহিলার মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে গেল। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। মানুষজন জানলো, মানবিকতা আজও বেঁচে আছে, শুধু সেটাকে খুঁজে বের করার দরকার।
ই-রিকশা চালকের কাজ আমাদের শেখায়, বড় বড় পরিবর্তন করার জন্য বিশাল শক্তি বা অর্থের প্রয়োজন হয় না। দরকার হয় কেবল সহানুভূতি, উদার মন আর সাহায্যের ইচ্ছা। এমনই ছোট কাজগুলোই মানুষের মনে বড় দাগ কাটে।
মানবিকতার সহজ পাঠ
সমাজে মানবিকতা বেঁচে আছে। আমরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে একটু সচেতন হই, একটুখানি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই, তবে জীবন অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।
বিঃ দ্রঃ – জবলপুর শহরের এক মানবিক কাহিনী অবলম্বনে লিখিতও।
|| সমাপ্ত ||
________