অভীকের গল্পটি এক আশ্চর্য রূপান্তরের কাহিনী। সে ছিল ছোট্ট এক শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। জীবন ছিল সীমিত চাহিদার মধ্যে, তবু তার হৃদয়ে ছিল এক বিশাল স্বপ্ন—একদিন নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যেখানে কেবল তার মেধা আর পরিশ্রমই তার পরিচিতি গড়বে। তবে এই স্বপ্নকে বড় করার সাহস তার নিজেরও ছিল না। ক্লাসের সেই সবার প্রিয় মেয়েটি, শ্রেয়া—তার চোখে যেন আলাদা আলো ছিল। শ্রেয়া ছিল শহরের এক প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে, সবসময় হাসিখুশি, আত্মবিশ্বাসী। তাকে দেখলে মনে হতো, সাফল্য আর প্রভাব যেন শ্রেয়ার মনের সঙ্গী।
অভীকের জীবনে শ্রেয়ার গুরুত্ব ছিল অনেক। সে কখনও স্বীকার করেনি, কিন্তু শ্রেয়ার জন্য তার এক অন্তর্লীন ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল। প্রতিদিন কলেজে শ্রেয়ার পাশে বসা, তাকে দূর থেকে দেখা, এসব ছিল তার জন্য আশ্চর্য এক অনুভূতি। অভীক ভাবত, “যদি একদিন তার জীবনের অংশ হতে পারতাম, তাহলে দুজনের জীবনটাই অন্যরকম হয়ে যেত।”
এমন একদিনে অভীক নিজের হৃদয়কে সাহস দিয়ে শ্রেয়ার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে এক নিঃশব্দ বিকেলে শ্রেয়াকে বলল, “শ্রেয়া, আমি তোমাকে পছন্দ করি।” বলেই একটি চিঠি ধরিয়ে দিল শ্রেয়াকে। চিঠিটা খুলে পড়েই শ্রেয়া প্রথমে হতবাক হয়ে তাকাল। কারণ সেই চিঠিতে লেখা ছিল “ভালোবাসি শ্রেয়া – ইতি অভীক”।
তারপর শ্রেয়ার ঠোঁটে এক বিদ্রূপের হাসি ফুটে উঠল। শ্রেয়ার সেই হাসি যেন অভীকের হৃদয় ভেঙে দিচ্ছিল। শ্রেয়া বলল, “তুমি? তুমি কীভাবে ভাবলে আমি তোমার মতো একজন সাধারণ ছেলের সঙ্গে থাকতে চাইব?”
অভীক অপমানিত বোধ করল, তবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। তার মনের ভেতর যেন কেউ এক শক্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করল। শ্রেয়া আরও বলল, “তুমি কখনোই আমার সমতায় উঠতে পারবে না। তোমার জীবন আর আমার জীবন দু’টি ভিন্ন জগৎ। এই ভুল আশা পোষণ করাই তোমার ভুল।”
কথাগুলো শুনে অভীক বুঝল, তার মন হয়তো বাস্তবতার থেকে দূরে ছিল। অপমানিত, আহত অভীক মাথা নিচু করে চলে এলো। তবু, সেই অপমান তাকে দুর্বল করেনি; বরং তার মনের গভীরে এক শক্তি সৃষ্টি করল। সে মনে মনে বলল, “আমি নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত বদলে দেব। আমি নিজেকে এমন একজন হিসেবে গড়ে তুলব, যার সামনে কেউ কটূক্তি করার সাহস পাবে না।” শুরু হয়ে গেল সেই কঠিন লড়াই।
অভীক কি পারবে সেই উচ্চতা ছুঁতে? পারবে কি শ্রেয়ার প্রতিটি বিদ্রূপের জবাব দিতে? জানতে পড়ুন এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব।
________