উত্তরাখণ্ডের রামনগরের সেই সকালে, নৈনিতালের দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল বাসটি। বাসে ছিলেন পর্যটক থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, কয়েকজন স্কুলের ছাত্রছাত্রীও। বাসটি যেমন সবসময়ের মতো এগোচ্ছিল, তেমনই যাত্রীরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা আর হাসি-মজায় ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎই চালকের মুখে আতঙ্কের ছাপ পড়ে। ব্রেক কেমন যেন জ্যাম হয়ে গিয়েছিল, গাড়ি কোনোভাবেই থামছে না। গাড়ি বিপজ্জনকভাবে বাঁক নিতে নিতে ছিটকে গেল খাদে, আর এক মুহূর্তে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
ধাক্কার অভিঘাতে যাত্রীদের চিৎকার মিশে গেল দুর্গম উপত্যকার সুনসান নীরবতায়। বাসের ভিতরে অন্তত ৩০ জন মানুষ আটকে পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভয়ে চুপ, আবার কেউ কেউ সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছিলেন।
একাধিক যাত্রী আহত অবস্থায় জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, নিচে খরস্রোতা নদীর তীরে তাদের বাস উল্টে পড়ে আছে। স্থানীয় কিছু সাহসী লোক নদীর জল পেরিয়ে বাসটির কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। এদিকে, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশ দ্রুত উদ্ধারকাজে হাত লাগায়।
বাসের মধ্যে আটকে পড়া মৃণাল নামের এক যুবক এক অদ্ভুত তথ্য শোনান। তিনি জানান, দুর্ঘটনার ঠিক আগেই বাসের একজন যাত্রী চুপিসারে চালকের দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলেছিলেন। চালক অপ্রস্তুতভাবে তাকিয়েছিলেন তার দিকে, আর এরপরই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এই তথ্য শুনে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ল—এই দুর্ঘটনা কি সত্যিই কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়েছিল, নাকি পরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র?
রাতের আঁধার নামতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা উদ্ধারকারী দল লক্ষ্য করল, বাসের যাত্রীর সংখ্যা শুরুতে যে হিসাব করা হয়েছিল, তার থেকে কম। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন জানালেন যে দুর্ঘটনার পরপরই বাসের মধ্যে থাকা একজন মধ্যবয়সী লোককে তাঁরা আর দেখতে পাননি। এই লোকটি পুরো যাত্রাপথে প্রায় চুপচাপ ছিলেন, এমনকি যখন বাস খাদে পড়ে তখনও তাঁর আর্তনাদ শোনা যায়নি।
এই রহস্যময় ব্যক্তি কে ছিলেন? দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে চালকের কাছে গিয়ে তার বলা কথার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়েই স্থানীয় পুলিশ এবং রাজ্যের গোয়েন্দা দল তদন্ত শুরু করে। তবে এরপর বাসের জানালার ফ্রেমের মধ্যে থেকে উদ্ধারকৃত একটি ছোট্ট খাম এই রহস্যকে আরও জটিল করে তোলে। খামের মধ্যে পাওয়া যায় একটি চিরকুট, তাতে লেখা, “অজানা পথে মুক্তি চাই, ধ্বংস হবে সব বন্ধন।”
বাসের সেই রহস্যময় ব্যক্তি নিখোঁজ রইলেন। স্থানীয়রা বলল, এই ঘটনার আগের রাতেই তারা পাহাড়ি পথ ধরে এক অচেনা লোককে দেখেছে, যেন সে কারও জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই ব্যক্তিই কি বাসের এই দুর্ঘটনার মূলে? পুলিশের তদন্তের সঙ্গে ধীরে ধীরে এই জটিল রহস্য উন্মোচিত হতে লাগল, আর পুরো এলাকাজুড়ে এক অদ্ভুত সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি হল।
|| সমাপ্ত ||
________