HomeHumorousHooghly: লেডি বার্ড রহস্য।

Hooghly: লেডি বার্ড রহস্য।

হুগলীর ইমামবাড়ার ঘটনা অবলম্বনে লিখিত

সৈয়দ মহম্মদ ওয়াসিমের বিয়ে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। বাড়ির লোকেরা ব্যস্ত, আর আত্মীয়স্বজনেরা তো খুশির আমেজে গা ভাসিয়েছেন। বুধবার রাতে ওয়াসিম গিয়েছিলেন তাঁর বড়দা সৈয়দ মুকারমের বাড়ি। আইবুড়ো ভাতের নিমন্ত্রণ বলে কথা। রাতের খাবারে জমজমাট পরিবেশ। হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই কেটে যায় বেশ কিছুটা সময়। বাইকটি গলিতে রেখে নিশ্চিন্ত মনে খেতে ঢুকেছিলেন ওয়াসিম।

খাওয়া শেষে যখন বাইরের দিকে এগোলেন, দেখলেন অদ্ভুত এক দৃশ্য। বাইকের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে একটি পুরোনো লেডি বার্ড সাইকেল। প্রথমে ভেবেছিলেন, কোনো মজার ছলে কেউ বাইক সরিয়েছে। কিন্তু সাইকেলটা দেখে তাঁর মেজাজ চড়ে যায়। রাগের সঙ্গে হতাশা মিশে গলা কাঁপল, “এটা কী ধরনের ঠাট্টা? বাইক গেল কোথায়?”

স্থানীয় লোকজন এসে ভিড় জমায়। কেউ কিছু বলতে পারে না। “চোরটা নিশ্চয়ই এই সাইকেল ফেলে রেখে গেছে,” মন্তব্য করেন একজন।

“এটা কী করে সম্ভব?” ভাবতে ভাবতে পুলিশে খবর দেন ওয়াসিম। কিন্তু বাইক পাওয়া তো দূরের কথা, পুলিশ জানায় একই রাতে ওই এলাকায় আরও একটি বাইক চুরি হয়েছে।

পরের দিন

পুলিশের সন্দেহ হয়, চোর হয়তো বাইক চুরির পাশাপাশি কোনও সংকেত বা বার্তা দিতে চেয়েছে। সেই সাইকেলের নিচে চাপা দেওয়া একটি পুরোনো কাগজের টুকরো খুঁজে পায় পুলিশ। কাগজে লেখা:
“যে দিন ভুলে যাবে নিজের শিকড়, সেদিন গাড়ি থাকলেও চলবে না।”

এত অদ্ভুত মেসেজ দেখে সবাই চমকে ওঠে। “এটা তো বাইক চুরি নয়, কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা।” পুলিশ বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ তদন্ত শুরু করে।

পরবর্তী সপ্তাহ

বিয়ের দিনের ঠিক আগের রাত। ওয়াসিম তখন সেজেগুজে বরযাত্রী প্রস্তুত করছেন। এমন সময় তাঁর ফোনে একটি অজানা নম্বর থেকে কল আসে। ওপাশ থেকে একটি ভারী গলা শোনায়, “তোমার বাইকটা পাওয়ার আশা ছাড়ো না। কিন্তু আগে ভেবে দেখো, তুমি কীভাবে নিজের আশেপাশের মানুষদের ভুলে যাচ্ছ। নতুন জীবনে পা রাখার আগে নিজের অতীতটাকে সম্মান দাও।”

ওয়াসিম চমকে উঠে বলে, “কে আপনি? আমার বাইকের কী হলো?”

“তোমার বাইক ঠিক আছে। কিন্তু এর চেয়ে বড় বিষয় হলো তোমার নিজের মানুষদের আর সম্পর্কের মূল্য দেওয়া। সুখী হতে হলে শুধু বাইকের ওপর ভরসা করে নয়, নিজের শিকড়ের মানুষদের মনে রাখো,” বলে ফোনটা কেটে যায়।

শেষ অধ্যায়

বিয়ের পর পুলিশ এক সন্ধ্যায় ফোন করে জানায়, ওয়াসিমের বাইক পাওয়া গেছে। সেটি কোনো দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়নি, বরং একটি পুরোনো গুদাম থেকে সঠিক অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। তার পাশেই রাখা ছিল সেই লেডি বার্ড সাইকেল।

সাইকেলটি দেখে ওয়াসিমের মনে পড়ে, তাঁর ছোটবেলায় মা তাঁকে এই মডেলের সাইকেল কিনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি। হয়তো চোর তাঁকে সেই দিকেই ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিল—প্রকৃত সুখ বাইক বা সম্পদে নয়, বরং সম্পর্ক আর স্মৃতির মূল্যায়নে।

বাইক ফিরে পেলেও ওয়াসিম আজও সেই সাইকেলটি রেখে দিয়েছেন। সেটা এখন তাঁর জীবনের এক মূল্যবান চিহ্ন।

বিঃ দ্রঃ – হুগলীর ইমামবাড়ার ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন