মুম্বাইয়ের ব্যস্ত সড়কে যীশু সেনগুপ্তের গাড়ি থামতেই ক্যামেরার ঝলকানি। কিছুদিন আগেও যীশুর হাসি ছিল প্রশান্তির প্রতীক। এখন সেই হাসিতে মিশে থাকে কিছুটা ক্লান্তি। নীলাঞ্জনার সঙ্গে বিচ্ছেদের গুঞ্জন, মুম্বইয়ে শিনাল সুর্তির সঙ্গে সম্পর্কের জল্পনা, আর তারই মাঝে পেশাগত সাফল্যের আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা যীশু যেন দুই ভিন্ন জীবনকে একসঙ্গে সামলানোর চেষ্টা করছেন।
নীলাঞ্জনা, যিনি একসময়ে যীশুর জীবনের কেন্দ্রে ছিলেন, এখন দুই মেয়ে সারা আর জ়ারাকে ঘিরে তার দিন কাটে। ছাদের দূরত্ব যে আসল জীবনের দূরত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেটা টলিপাড়ায় কারও অজানা নয়। তবে প্রকাশ্যে কিছুই বলেননি যীশু বা নীলাঞ্জনা। নিঃশব্দেই দূরত্বের গল্প লেখার অভ্যাস তৈরি করেছেন তাঁরা।
এদিকে, যীশু মেদিনীপুরের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হাজির। তার পরনে কীর্তনিয়ার পোশাক। “শাস্ত্রে কয়েছে পুরুষ মানুষের প্রধান অস্তর ধৈর্য আর বীর্য,” সংলাপের জোরে মঞ্চে যেন জীবন্ত হয়ে উঠল তার আসন্ন ছবি ‘খাদান’-এর চরিত্র। একটি ফোনকলের মাঝেই অভিনেতা দেবকে মজা করে বললেন, “ভাই, দোস্তের জন্য জান দিতে পারি, লিতেও পারি!” উপস্থিত দর্শকেরা হাসিতে ফেটে পড়লেন।
তবে মজা আর কাজের ব্যস্ততার আড়ালে যীশুর চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকে কিছু বিষণ্ণতা। আসানসোলে ‘খাদান’ ছবির শুটিংয়ে নিজের চরিত্রে ঢুকে গেলেও, বাস্তব জীবনের টানাপোড়েন যেন তাকে ছাড়ে না। কৃষ্ণ আর সুদামার বন্ধুত্ব, আর যুদ্ধের আভাস মাখা সংলাপ তার বাস্তব জীবনের যুদ্ধে এক অদ্ভুত প্রতিধ্বনি তৈরি করে।
এই সবের মাঝে শিনাল সুর্তি এসে যেন যীশুর জীবনে নতুন রং এনেছেন। মুম্বইয়ের কোনও এক কফিশপে দুজনকে একসঙ্গে দেখে উঠেছে গুঞ্জন। নতুন সম্পর্কের এই আলো যেন পুরনো সম্পর্কের ছায়া আরও দীর্ঘ করে তুলেছে।
অন্যদিকে, নীলাঞ্জনার জীবনও থেমে নেই। দুই মেয়ে সারা আর জ়ারা, তাদের পড়াশোনা, নাচের ক্লাস, আর ছোট্ট খুশির মুহূর্তগুলোই এখন তার পৃথিবী। হয়তো কোনও এক রাতে, যখন বাড়ি নির্জন হয়ে যায়, তখন পুরনো স্মৃতিগুলো তাকে তাড়া করে ফেরে।
‘খাদান’-এর গানের প্রথম ঝলক ইতিমধ্যেই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। “রাজার রাজা” গানের ছন্দে ছন্দে যেন যীশুর নিজের জীবনের টানাপোড়েনের গল্প মিশে গেছে। কীর্তনিয়ার রূপে যীশু যেন এক মুহূর্তে যুদ্ধজয়ের প্রত্যয়ী, আবার অন্য মুহূর্তে বিষণ্ণ এক দার্শনিক।
মেদিনীপুরের মঞ্চে তিনি যখন সংলাপ বলছিলেন, তখন তার মনে কি চলছিল? একদিকে পেশাগত সাফল্যের হাতছানি, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের অপূর্ণতা। এই দুই বিপরীত দিগন্তের মাঝে দাঁড়িয়ে যীশু যেন এক অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতীক।
নীলাঞ্জনা কি কখনও যীশুকে এই ভূমিকায় দেখবেন? হয়তো নয়। হয়তো তিনি এখন শুধু মেয়েদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনে চলেছেন। কিন্তু যীশু-নীলাঞ্জনার সম্পর্কের এই অব্যক্ত গল্প, জীবনের বাস্তব আর চলচ্চিত্রের কাল্পনিকতার মাঝখানে, অনুরাগীদের মনে চিরদিন বেঁচে থাকবে।
কীর্তন গায়কের হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা যোদ্ধার যন্ত্রণাই যেন যীশুর জীবনের প্রতিচ্ছবি। একদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি, অন্যদিকে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা। এই গল্প কি শুধুই যীশুর, নাকি সবার, যারা জীবনের দ্বন্দ্বের মধ্যে নিজের অবস্থান খুঁজে ফিরছে?
|| সমাপ্ত ||
________