প্রথম পর্ব: পরিচয়
নদীর ধারে গ্রামের মেলা। চঞ্চল বাতাসে ছড়িয়ে থাকা তালের পাখা, মাটির মাটকা আর কেয়া পাতার নৌকার দোকানের ভিড়ে প্রথমবার দেখা হয়েছিল অয়ন আর কেয়ার। অয়ন তখন স্থানীয় কলেজের ছাত্র, আর কেয়া ছিল গ্রামেরই এক মেয়ে, যার চুলে যেন মেঘ জমা। মেলার এক কোণে কেয়া পাতার নৌকা বানাচ্ছিল কেয়া। হাসতে হাসতে সে অয়নের হাতে একটি নৌকা দিয়ে বলেছিল, “এই নৌকাটা যদি নদীতে ভাসাও, তা হলে স্বপ্নপূরণ হবে।”
দ্বিতীয় পর্ব: বন্ধুত্বের সূচনা
সেদিন থেকেই অয়ন আর কেয়ার বন্ধুত্বের শুরু। নদীর ধারে বসে গল্প, ফুল তোলা, আর রাতের তারাদের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনে চলত তারা। কেয়ার স্বপ্ন ছিল একটা বড় স্কুল খোলা, আর অয়ন চেয়েছিল শহরে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।
তৃতীয় পর্ব: সম্পর্কের গভীরতা
সময় যত গড়াতে থাকল, তাদের সম্পর্কের গভীরতাও বাড়তে লাগল। কিন্তু এই ভালোবাসা প্রকাশ্যে ছিল না। গ্রামের নিয়ম, সমাজের কটূকথা আর পারিবারিক মানসিকতা তাদের সম্পর্কের মাঝে একটা দেয়াল তুলেছিল।
চতুর্থ পর্ব: অয়নের শহরে যাত্রা
অয়ন উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে চলে যায়। যাওয়ার সময় কেয়াকে বলে, “ফিরে এসে তোমাকে নিয়ে যাব। আমাদের স্বপ্ন একসাথে পূরণ করব।” কেয়া তার হাতে একটি কেয়া পাতার নৌকা দিয়ে বলেছিল, “যদি কখনো মনে হয়, তুমি আমাকে ভুলে যাচ্ছ, এই নৌকাটা নদীতে ভাসিয়ে দিও। তা হলে তুমি আমাকে আবার মনে করবে।”
পঞ্চম পর্ব: অপেক্ষার দিনগুলি
অয়ন শহরে নিজের পড়াশোনায় মন দেয়। কেয়া প্রতিদিন নদীর ধারে বসে অয়নের চিঠির অপেক্ষা করত। প্রথমদিকে চিঠি আসত নিয়মিত। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই চিঠি আসা বন্ধ হয়ে গেল।
ষষ্ঠ পর্ব: ভুল বোঝাবুঝি
শহরের চাকচিক্য আর অয়নের নতুন বন্ধুদের মাঝে কেয়া যেন একসময় হারিয়ে যেতে লাগল। কেয়ার কাছে গ্রাম থেকে আসা ছোট ছোট উপহার আর ভালোবাসার বার্তাগুলো হয়তো অয়নের ব্যস্ত জীবনের মাঝে ম্লান হয়ে গিয়েছিল।
সপ্তম পর্ব: বিয়ের প্রস্তাব
এদিকে কেয়ার পরিবার তার বিয়ের জন্য অন্য একটি পরিবারের প্রস্তাব গ্রহণ করে। কেয়া বুঝতে পারে, অয়নকে ভুলে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই।
অষ্টম পর্ব: ফিরে আসা
একদিন অয়ন শহর থেকে ফিরে আসে। তার বুক পুড়তে থাকে কেয়াকে দেখার জন্য। কিন্তু কেয়াকে দেখতে গিয়ে সে জানতে পারে, কেয়ার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে।
নবম পর্ব: বিদায়
কেয়ার চোখে জল, কিন্তু সে দৃঢ়ভাবে বলে, “তুমি সময়মতো আমাকে নিয়ে যাওনি, অয়ন। এখন আমাকে ভুলে যাও।”
দশম পর্ব: কেয়া পাতার নৌকা ভাসানো
অয়ন নদীর ধারে বসে কেয়া তাকে দেওয়া সেই পুরনো কেয়া পাতার নৌকাটা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তার চোখে জল আর মনের ভেতর বিষাদময় স্মৃতি।
উপসংহার
কেয়ার বিয়ে হয়ে যায়, আর অয়ন তার জীবনের শূন্যতা নিয়ে শহরে ফিরে যায়। কেয়া পাতার নৌকা তাদের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে রয়ে যায়, যা ভেসে চলে অনন্তকালের দিকে।
গল্পটি আমাদের শিখায় যে, ভালোবাসা যদি সময়মতো নিজের পূর্ণতা না পায়, তবে তা গভীর বেদনার স্মৃতি হয়ে থাকে। কেয়া পাতার নৌকার মতো, ভালোবাসা কখনো কখনো ভেসে চলে দূর, কিন্তু তার সুর প্রতিধ্বনিত হয় হৃদয়ে।
|| সমাপ্ত ||
________