HomeAllMeyer Chitay Mayer Divorce: মেয়ের চিতায় মায়ের ডিভোর্স

Meyer Chitay Mayer Divorce: মেয়ের চিতায় মায়ের ডিভোর্স

এই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে প্রতিনিয়ত

পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটের নিরিবিলি পাড়াটায় আজ যেন শোকের ছায়া। তৃষিকা চক্রবর্তীর আত্মহত্যার খবর রটতেই পাড়ার সকলের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—এই ছোট্ট মেয়েটির জীবন কি এরকম করুণভাবে শেষ হওয়ারই ছিল?

তৃষিকার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছিল মাস পাঁচেক আগে। দীর্ঘদিনের মনোমালিন্যের পর বিচ্ছেদে উপনীত হন তরুণ ও তনুকা। সন্তানের ভালোর জন্যই তারা এমনটা করেছিলেন বলে তাঁদের বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সেই ভালোই হয়তো তৃষিকার কাছে ছিল সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া যেন তৃষিকার পৃথিবীটাই ভেঙে দেয়। মা তনুকার কাছে থাকলেও তার মুখের মলিনতা পাড়ার সবার চোখে পড়ে। পাড়া-পড়শিরা, বন্ধুরা, এমনকি তার শিক্ষকরাও লক্ষ্য করতেন, একসময়ের উজ্জ্বল মেয়েটি এখন কেমন চুপচাপ। কেউ বুঝতেই পারেনি তার মনের গভীর বেদনা কতটা ভয়ংকর হতে পারে।

বাবা-মায়ের সম্পর্কের জটিলতা, তাদের সম্পর্কের ভাঙনের প্রভাব, আর সেই সঙ্গে সমাজের চাপ—এসবই যেন ধীরে ধীরে অবসাদের বেড়াজালে বন্দী করেছিল তৃষিকাকে। এমন ঘটনা সমাজে আজকাল খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবেছি, বাবা-মায়ের এই ভাঙন সন্তানদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে? বিশেষ করে এমন কিশোর বয়সে, যখন চারপাশের পৃথিবীকে বুঝতে শেখার চেষ্টা করে, ভালোবাসা ও নিরাপত্তার খোঁজ করে, তখনই তার নিজস্ব পৃথিবীটা যদি এমনভাবে ভেঙে যায়, তবে তার মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে অজানা এক শূন্যতার জন্ম হয়, যেটা ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে।

এ গল্প শুধু তৃষিকার নয়—এমন আরো অসংখ্য শিশু, কিশোর-কিশোরী এই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে প্রতিনিয়ত। আমাদের সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে এখনও সঠিক সচেতনতা নেই। হয়তো অনেক ক্ষেত্রে তা অনিবার্য, কিন্তু বাবা-মায়ের এই সিদ্ধান্ত সন্তানদের প্রতি কী প্রভাব ফেলবে, তাদের কেমন মানসিক সমর্থন প্রয়োজন, তা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

এই ঘটনা আমাদের সমাজে একটি বার্তা দেয়—বিচ্ছেদ যদি প্রয়োজন হয়, তবে তার প্রতিটি ধাপ যেন সন্তানের মঙ্গলের কথা ভেবে নেওয়া হয়। বাবা-মায়ের সম্পর্কের সমাপ্তি সন্তানের জীবনেরও সমাপ্তি ডেকে আনবে না। নতুন সম্পর্কের সূচনা এমন ভাবে করা দরকার, যেখানে বাবা-মায়ের সম্পর্কের সমাপ্তি সন্তানের জীবনেরও সমাপ্তি ডেকে আনবে না। শিশুর মনের অবস্থা বোঝা, তাকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া, এবং তার সামনে বিচ্ছেদকে ধীরে ধীরে বোঝানোর মাধ্যমে এই ক্ষত অনেকটা কমানো সম্ভব।

তৃষিকার মর্মান্তিক পরিণতি সমাজকে ভাবতে বাধ্য করবে, যেন প্রতিটি বাবা-মা নিজেদের সিদ্ধান্তের আগে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন হন। কারণ সন্তানকে সুখে রাখতে না পারলে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো আসলে কিসের জন্য?

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন