নবম শ্রেণির ছাত্রী অনুরাধা। সবার চোখে সে এক মিষ্টি স্বভাবের, মনখোলা মেয়ে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে হয়তো সে লড়ছিল এমন কিছু অনুভূতির সঙ্গে, যা কাউকেই বুঝতে দেয়নি। পরিবার সম্প্রতি নিউ বারাকপুরে এই নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, এবং তার সঙ্গে পরীক্ষার চাপ—এসব সামলে নেওয়া সহজ ছিল না তার জন্য।
রাতের বকুনি
রবিবার রাতে যখন মা খাবার টেবিলে বসে মোবাইল দেখা নিয়ে বকুনি দিলেন, তখন অনুরাধার মন খারাপ হয়ে যায়। মায়ের কথাগুলো হয়তো ছোট ছিল, কিন্তু তার মনে আঘাত করেছিল। সে অভিমানে খাওয়া ছেড়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
মায়ের জন্য বিষয়টা ছিল একটা স্বাভাবিক বকুনি। সন্তানকে ঠিক পথে রাখতে মাঝে মাঝে একটু ধমক তো লাগেই। কিন্তু মা ভাবতেই পারেননি এই ছোট ঘটনা মেয়ের মনে এত বড় প্রভাব ফেলবে।
একাকীত্বের গভীরে
রাতে অনুরাধা নিজের ঘরে শুয়ে ছিল, কিন্তু ঘুম আসছিল না। মায়ের কথাগুলো বারবার তার মনে ঘুরছিল। সে নিজেকে ভীষণ একা অনুভব করছিল। এমন সময় হয়তো তার মনে হল, কেউ তাকে বোঝে না, কেউ তাকে গুরুত্ব দেয় না।
পরের দিন সকালে সবাই যখন যার যার কাজে ব্যস্ত ছিল। তখন অনুরাধার ভেতরের সেই চাপা অভিমান আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। তার মনে হচ্ছিল, জীবনটা বুঝি মূল্যহীন।
মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত
সকালবেলায় সে চুপিচুপি ছাদে উঠে গেল। পায়ে কোনও শব্দ করল না। যাতে কেউ টের না পায়। তার চোখের সামনে ছিল নিরবচ্ছিন্ন আকাশ। মনে হয়, এই আকাশের মতো মুক্তি পেতে চেয়েছিল সে। কিন্তু মুক্তি পেতে গিয়ে বেছে নিল চরম পথ।
অল্পক্ষণ পরে ভারী আওয়াজে আশেপাশের লোক ছুটে এল। কেউ বুঝতে পারছিল না, এত সুন্দর, হাসিখুশি একটা মেয়ে কেন এমন করল।
পরিবারের শোক
অনুরাধার মা তখন রান্নাঘরে ছিলেন। শব্দ শুনে ছুটে এসে মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তিনি ভেঙে পড়লেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, ততক্ষণে সব শেষ।
দাদা পড়তে গিয়েছিল, এসে স্তব্ধ হয়ে গেল সেও। “আমরা কি এমন কিছু করেছিলাম যে ওর মন এত খারাপ হয়ে গেল?”—প্রশ্নটা সবাইকে তাড়া করে ফিরছিল।
শিক্ষা এবং উপলব্ধি
এই ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি শিক্ষা। আমরা হয়তো বুঝতে পারি না, ছোট ছোট কথাও কীভাবে একটি কিশোর বা কিশোরীর মনে গভীর দাগ কাটতে পারে।
মোবাইল ফোন, পরীক্ষার চাপ, কিংবা পারিবারিক কথাবার্তা—সবই একটি শিশুর মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলে। অনুরাধার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সন্তানদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলা উচিত, যাতে তারা নিজেদের একা না ভাবে।
শেষ কথন
অনুরাধার হারিয়ে যাওয়া জীবন আর ফেরানো যাবে না। কিন্তু তার গল্প যদি অন্য বাবা-মা, অন্য সন্তানকে বোঝাতে পারে যে মানসিক আঘাত কতটা ভয়ানক হতে পারে, তবে সেটাই হবে তার প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
|| সমাপ্ত ||
________