সন্ধ্যার নীরবতা গ্রাস করেছে হাওড়ার জগাছার উনসানি নতুন সানা পাড়া এলাকা। তবে, কিশোরীর মা অমলা দাসের ঘরে এখনো যেন কান্না ও আশঙ্কার এক গভীর ধ্বনি বাজছে। তার মেয়ে, নবম শ্রেণীর ছাত্রী প্রিয়া, গত ২৯ অক্টোবর হঠাৎ নিখোঁজ। ঘটনাটি কেবল একটি সাধারণ হারিয়ে যাওয়ার গল্প নয়, বরং রহস্যে মোড়া এক জটিলতা, যা পরিবার ও প্রতিবেশীদের মনে শঙ্কা ও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।
সেদিন সকালে, কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রুটিন চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন প্রিয়ার মা। ফিরে এসে দেখেন, উনুনে বসানো ভাতের হাঁড়ি এখনো গরম। মেয়ে হয়তো স্কুলে গেছে, ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও প্রিয়া আর ঘরে ফিরে আসেনি। প্রথমে শুধু উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন মা, পরে তিনি থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এলাকার বাসিন্দারা শীঘ্রই জানতে পারেন, প্রিয়া একাই নয়, তার মাসতুতো বৌদি সুলগ্না দাস এবং সুলগ্নার চার বছরের ছেলে সেও নিখোঁজ। সুলগ্নার স্বামী সুরেশ দাস দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। বৌ এবং ছেলের জন্য তিনিও থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন। তার সন্দেহ, স্ত্রী তার ছোট বোন প্রিয়াকে নিয়ে কোথাও পালিয়েছে।
কিন্তু কেন? এই প্রশ্নে এলাকা জুড়ে কৌতূহল আর জল্পনা তৈরি হয়েছে। প্রিয়া ও সুলগ্নার মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাই প্রথমদিকে সবাই ভেবেছিলেন, হয়তো প্রিয়া তার বৌদির সঙ্গে আত্মীয় বাড়ি গেছে। কিন্তু দিন গড়াতে বুঝতে পারলেন, ঘটনা কেবল সম্পর্কের বাঁধনে নয়। এক প্রতিবেশী জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি প্রিয়াকে স্কুলের পোশাকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছেন। তারপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। সবাই অবাক হয়ে ভাবছেন, একই দিনে এভাবে তিনজন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার রহস্যটা কী?
প্রিয়ার মা অমলা, যিনি দর্জির কাজ করে সংসার চালান, মেয়েকে ঘরে ফিরে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে আছেন। তার একমাত্র সম্বল মেয়ের চিন্তায় গভীর উদ্বেগ আর শূন্যতায় মনটা ভারী হয়ে উঠেছে। ভয় আর আতঙ্ক তার চোখেমুখে স্পষ্ট।
জগাছা থানার পুলিশ তদন্তে নেমেছে। প্রিয়ার নিখোঁজ হওয়া আর সুলগ্নার একসাথে পালিয়ে যাওয়া কি সত্যিই কোনও পাচার চক্রের সাথে জড়িত। নাকি অন্য কোনো গভীর রহস্য? পুলিশ এখনো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছে।
গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে একটি অদ্ভুত সন্ত্রাস। প্রতিবেশীরা একে একে গল্প করছে, “প্রিয়া কি স্বেচ্ছায় বৌদির সাথে গেছে, নাকি কোনও বিপদে পড়েছে?” কারোর মনেই শান্তি নেই।
অমলার অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হয় না। প্রতিটা মুহূর্তে তিনি প্রিয়ার সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করেন। এই ঘটনার পর প্রতিবেশীরাও যেন আর স্বাভাবিক হতে পারছেন না। প্রিয়ার বাড়ির সামনে লোকজন জটলা করে দাঁড়ায়, নিজেদের মধ্যে প্রশ্ন করে, “কী এমন ঘটেছিল যে এই মেয়েটা নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে গেল?”
এদিকে পুলিশ হাল ছাড়েনি। তারা নদীর ধারে এবং দূরের শহরগুলোর রেল স্টেশনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে। সন্দেহভাজন নারী পাচার চক্রগুলোর গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
সন্ধ্যা থেকে রাত গড়িয়ে যায়, কিন্তু কোনও খবর আসে না। প্রত্যেকের মনে একটাই প্রশ্ন, “প্রিয়া কি আবার ঘরে ফিরে আসবে?”
গল্পটা এখানেই শেষ নয়…
________