HomeAllNirob Ghatok: নীরব ঘাতক

Nirob Ghatok: নীরব ঘাতক

চারপাশে যেন অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা নেমে এলো

রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে তিনজন ফল বিক্রেতা ধীরে ধীরে বাড়ির পথে পা বাড়াচ্ছিলেন। তাদের ঝোলায় তখন সারাদিনের কাজের ক্লান্তি আর সাফল্য মিশে আছে। পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে আসা এই তিনজন ফল বিক্রেতা, তাদের পিছু টানছে ঘর, পরিবার আর প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দ। কালীপুজোর আগের দিন বিক্রিও বেশ ভালোই হয়েছে, তাই মনের মধ্যে একরকম স্বস্তি আর তৃপ্তি। তবে একটাই সমস্যা – ঝড় আর বৃষ্টির দাপটে রাস্তায় জমা জল।

রাস্তায় জমা জলের এই সমস্যাটা নতুন নয়, তবে আজকের বৃষ্টিতে যেন সবকিছু আরও খারাপ হয়ে গেছে। পথচারীরা আজ আর তেমন কেউ নেই, অনেকেই আগেই বাড়ির পথে পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য অপেক্ষা ছিল অন্য এক বাস্তবতা। জমা জল এড়িয়ে চলার সহজ উপায় ছিল না।

শেষমেশ, একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছল তারা। রেললাইন ধরেই হাঁটা শুরু করল তিনজন। রেললাইন ধরে হাঁটা কখনোই নিরাপদ নয়, কিন্তু জমা জলকে পাশ কাটানোর আর কোনো উপায় ছিল না। রাত তখন প্রায় সাড়ে ৯টা। চারদিকে গভীর অন্ধকার, মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগছিল তাদের গায়ে। তিনজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল, যেন এই বিপদটাকে একটু হালকা করে দেখা যায়।

তারা আস্তে আস্তে এগিয়ে চলছিল। অন্ধকারের ভেতর রেললাইনের প্রতিটি পা ফেলার শব্দ যেন কোনো অশুভ বার্তা বহন করছে। তখনও তাদের নজর যায়নি রেললাইন বরাবর বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেনের দিকে। রাতের নিস্তব্ধতায় দূরে ট্রেনের আলো ঝিকমিক করে উঠল, কিন্তু তাদের পথ চলা থামল না। হয়তো তারা ট্রেনের আওয়াজ শুনতে পায়নি, বা হয়তো অন্য কোনো ভাবনায় মগ্ন ছিল।

কিছুক্ষণ পরেই সেই ট্রেনের হর্ন কানে এল। একজন পিছন ফিরে তাকাতে যাবার আগেই ট্রেনের গর্জন যেন সবকিছু মুছে দিল। মুহূর্তের ভেতর সবকিছু যেন অন্ধকারে ডুবে গেল, তাদের আর্তনাদ শোনা গেল না, কেউ কোনো শব্দ করতে পারল না।

প্রথম দুজনের মৃত্যু হলো ঘটনাস্থলেই। তৃতীয় জন তখনও নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু অল্প কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সেই প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে গেল। সেও রেললাইনের উপরে লুটিয়ে পড়ল, তার নিথর দেহ পড়ে রইল। চারপাশে যেন অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা নেমে এলো। তীব্র বৃষ্টির ঝাপটা সেই মৃতদেহগুলোকে ধুয়ে মুছে দিতে লাগল, যেন প্রকৃতি নিজেই সেই অশুভ ঘটনার সাক্ষী হয়ে নীরবে কাঁদছে।

স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে দেখল তিনটি নিথর দেহ। লোকজনের মধ্যে তখন ভয়, চাঞ্চল্য আর শোক। কেউ ভাবতে পারছিল না, কিছুক্ষণ আগেও যারা জীবিত ছিল, তাদের নিথর দেহ রেললাইনের উপরে পড়ে আছে। চারদিকে কান্নার আওয়াজ, ভীতির স্রোত ছড়িয়ে পড়ল। পুলিশ এসে লাশগুলো সরিয়ে নিল, কিন্তু সেই রাতে কেউ চোখের পাতা এক করতে পারল না। তিনটি পরিবার দুঃখের আর শোকের সাগরে বিলীন হয়ে গেল।

|| সমাপ্ত ||

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন