HomeStory of WestbengalMurshidabad: প্ল্যাটফর্মের রক্তাক্ত কোল

Murshidabad: প্ল্যাটফর্মের রক্তাক্ত কোল

চিন্তা না করে তিনিও ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিলেন

গোবরগাড়া গ্রামের ছোট্ট মাটির বাড়িটা আলো করে রেখেছিল ইনামুল মণ্ডলের হাসি। পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে তাঁর সংসার চালানো সহজ ছিল না। তবু দুই মেয়ে, এক ছেলে, আর স্ত্রীকে সুখে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। দিন কয়েক আগে দাদু হয়েছিলেন ইনামুল। ছোট নাতির মুখ দেখে যেন নতুন করে জীবনকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন।

তাঁর দুই বোন, রেশমা আর আরিফা, উত্তরাখণ্ড থেকে এসেছিল কদিনের জন্য। ভাই-বোনের এই মিলন অনেক দিন পর। কিন্তু সময় বেশি ছিল না। বুধবার রাতে ইনামুল ঠিক করলেন, বোনদের হাওড়া পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন, সেখান থেকে তাঁরা উত্তরাখণ্ডগামী ট্রেনে ফিরবেন।

খাগড়াঘাট স্টেশনে পৌঁছনোর পরের সময়টুকু যেন ঝড়ের মতো কেটে গেল। ট্রেন এসে গেছে। ইনামুল দুই বোনকে নিয়ে দ্রুত উঠলেন। ট্রেন চলতে শুরু করতেই রেশমার মনে পড়ল, তাঁদের একটি ব্যাগ প্ল্যাটফর্মে রয়ে গেছে। তাড়াহুড়োয় ভুলে ফেলে এসেছিলেন।

“তুমি বস, আমি নিয়ে আসছি,” বলেই ট্রেনের দরজার দিকে ছুটলেন ইনামুল। রেশমা আর আরিফা কিছু বলতে চাইলে তাদের কথা হাওয়ায় ভেসে গেল। ইনামুল দরজায় দাঁড়িয়ে প্ল্যাটফর্মে লাফ দিলেন। কিন্তু ঠিক তখনই বিপদটা ঘটল। পায়ের তালু মচকে গিয়ে ইনামুল ট্রেন আর প্ল্যাটফর্মের মাঝের ফাঁকে পড়ে গেলেন।

রেশমা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ভাইয়ের পতন। একটা মুহূর্তও চিন্তা না করে তিনিও ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিলেন। শরীর আছড়ে পড়ল প্ল্যাটফর্মের রুক্ষ পাথরে। রক্তে ভেসে গেল চারপাশ। আরিফা চিৎকার করে উঠল, “দাদা! দিদি!”

স্টেশনে লোকজন ছুটে এল। কেউ পুলিশে খবর দিল। কেউ স্ট্রেচার আনল। ইনামুলকে আর রেশমাকে নিয়ে গেল স্থানীয় হাসপাতালে। কিন্তু ইনামুলকে আর বাঁচানো গেল না। প্ল্যাটফর্মের রক্তাক্ত কোলেই যেন তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায় লেখা হয়ে গিয়েছিল।

রেশমা এখনও বেঁচে আছেন, তবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। হাসপাতালের বেডে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। আর আরিফা? সে ভাঙা মন নিয়ে দাদার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।

গোবরগাড়া গ্রামটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ইনামুলের স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা শুধু তাকিয়ে আছে শূন্যে। পরিবারকে একত্রে রেখে যে মানুষটা সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন, সেই ইনামুল আজ আর নেই। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু যেন গোটা গ্রামে একটা শূন্যতা তৈরি করে দিয়েছে।

রেশমার মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই শুধু একটাই প্রার্থনা করছে—তিনি যেন বেঁচে যান। আর বেঁচে থেকে দাদার গল্পটা সবাইকে বলতে পারেন। একটি ভুল পদক্ষেপ কীভাবে এক জীবনের আলো নিভিয়ে দিল, আর একটি পরিবারকে চিরতরে অন্ধকারে ঠেলে দিল।

বিঃ দ্রঃ – মুর্শিদাবাদের ঘটনা অবলম্বনে লেখা।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন