তারকেশ্বর TV: ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকার দাবিহীন আমানত রয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই অদাবিকৃত অর্থের মধ্যে ৩৬,১৮৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কাছে রয়েছে এবং ৬,০৮৭ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কের কাছে রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ শেষে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে মোট দাবিহীন আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭,৭৮৪ কোটি টাকা। তবে অর্থ মন্ত্রকের একটি নথিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২,২৭২ কোটি টাকা।
সহজ কথায় বলতে গেলে, গত পাঁচ বছরে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির দাবিহীন আমানত প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে। শুধু গত আর্থিক বছরেই সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে বেওয়ারিশ আমানতের পরিমাণ ছিল ৩২,৯৩৪ কোটি টাকা, যা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) দ্বারা নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে – সেভিংস অ্যাকাউন্টে স্থায়ী আমানত, যা মেয়াদপূর্তির তারিখ থেকে ১০ বছর ধরে দাবিহীন থাকে সেগুলিকে আনক্লেমড ডিপোজ়িট (দাবিহীন আমানত) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। আরবিআই শুধু সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কই নয়, বিদেশি ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্কও অদাবিকৃত টাকার হিসাব রাখে।
‘নিউজ ১৮’ -এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, অর্থ মন্ত্রকের রেকর্ড থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের হিসেব অনুযায়ী ভারতের সমস্ত ব্যাঙ্কে মোট দাবিহীন টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৩৫ কোটি টাকা। ২০০২ সালের শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৮০ কোটি টাকায়। বছরের পর বছর ধরে, এই সংখ্যাটি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ১৯৯৯ সালে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) দাবিহীন আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪৪.২৬ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৪৬৯.৯৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২,১৫৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে তা পৌঁছেছে ৩,৫৭৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যে এসবিআইয়ের দাবিহীন পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮,০৮৬ কোটি টাকা। এর অর্থ হ’ল এসবিআইতে দাবিহীন আমানত দুই দশকের ব্যবধানে প্রায় ৫৬ গুণ বেড়েছে।
বিপরীতে, ভারতের পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলির রেকর্ড অনুসারে, ২০০০ সালে এই ব্যাংকগুলির কাছে ৪০১.৯৪ কোটি টাকা ছিল যার কোনও বৈধ মালিক ছিল না। ২০১১ সালে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১,৯৪৪.৫২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা ৯,০১৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫,০১২ কোটি টাকায়। মূলত, গত দুই দশকে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিতে দাবিহীন আমানত প্রায় ৯০ গুণ বেড়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, এই কোটি টাকার দাবিদারের অভাবের কারণ গ্রাহকের মৃত্যু, এক দেহ টেকে অন্য দেশে চলে যাওয়া, পারিবারিক বিরোধ, আইনি সমস্যা এবং অন্যান্য কারণ। মূলত সেভিংস ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট বন্ধ না হওয়ার কারণেই দাবিহীন আমানত বেড়েছে। মৃত গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা দাবি না করায় অনেক দাবিহীন টাকা জমেছে ব্যাঙ্কগুলির কাছে।
ব্যাংকগুলি বার্ষিক এই পরিত্যক্ত অ্যাকাউন্টগুলির একটি তালিকা আরবিআইকে জমা দেয়। তহবিলগুলি পরবর্তীকালে আমানতকারী শিক্ষা ও সচেতনতা বা ডিপোজিটর এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস (ডিইএ) তহবিল প্রকল্পে স্থানান্তরিত হয়, যা আরবিআই দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়। তবুও, গ্রাহক বা তাদের সঠিক উত্তরাধিকারীরা বৈধ প্রমাণ দিয়ে সেই টাকা তুলতে পারবেন। উপরন্তু, সুদ-ও পাবেন।
________