দুর্গাপুরের সকালে, হাসপাতালের কেবিনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। তাঁর পাশে বসে আছেন তাঁর বাবা, উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। উজ্জ্বল তাঁর ছেলের হাত ধরে মৃদু হেসে বললেন, “সব ঠিক আছে বাবা, তোমার জন্য আমার একটা কিডনি দিতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।” পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি উজ্জ্বল তাঁর ছেলের জন্য নিজের একটি কিডনি দান করেছেন, যেন নিজের জীবন থেকে একটু অংশ তুলে দিয়েছেন সন্তানের শরীরে।
পার্থ বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রথমদিকে দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে ডাক্তার তাঁকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু অপারেশনের কথা শুনে পার্থ ভয় পেয়ে সরে যান। এরপর তিনি দক্ষিণ ভারতে যান আরও উন্নত চিকিৎসার আশায়। সেখানেও ডাক্তার একই কথা বলেন—কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায়। হতাশ হয়ে ফিরে আসেন পার্থ। তখনও তিনি জানতেন না যে তাঁর বাবা তাঁর জন্য এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় খুব সরল মানুষ। নিজের সামান্য রোজগারে সংসার চালানো এবং ছেলেমেয়ের পড়াশোনা করানো তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। ছেলের মুখের হাসি এবং সুস্থতাই তাঁর জীবনের একমাত্র স্বপ্ন। যখন ডাক্তাররা জানান যে তাঁর একটি কিডনি দিলে পার্থের জীবন ফিরতে পারে, তখন আর কোনো ভাবনা করেননি উজ্জ্বল।
“তুমি আমার সন্তান, তোমার জন্য এইটুকু করতে না পারলে বাবা হিসেবে আমার বেঁচে থাকা বৃথা।” উজ্জ্বল এভাবেই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন পরিবারকে। পার্থ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি, এত বড়ো ত্যাগের জন্য তাঁর বাবা রাজি হবেন। তবু বাবার এই সাহস দেখে তিনি যেন নিজেও নতুনভাবে সাহস খুঁজে পান।
গল্প এখানেই শেষ নয়। পরবর্তী পর্ব (অর্থাৎ পর্ব ২ হল শেষ পর্ব)
________