HomeAllPartha Chatterjee story part 2: পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কিডনি দান পর্ব ২

Partha Chatterjee story part 2: পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কিডনি দান পর্ব ২

সকলেই মিলে পার্থ এবং উজ্জ্বলের জন্য প্রার্থনা করেন

পার্থের কিডনি প্রতিস্থাপনের দিন ঠিক হল দুর্গাপুরের সেই হাসপাতালেই, যা আগে কখনও কিডনি প্রতিস্থাপন করেনি। হাসপাতালে তাঁকে ঘিরে ডাক্তারদের এক অবর্ণনীয় ব্যস্ততা। নেফ্রোলজি বিভাগের ডাক্তাররা অত্যন্ত পরিশ্রম এবং গবেষণার মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটির জন্য প্রস্তুতি নেন। এটি ছিল দুর্গাপুরে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন, এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেও এই প্রথমবার এমন একটি সার্জারি হতে চলেছে।

অপারেশনের দিন হাসপাতালে এক অদ্ভুত স্নায়ুক্ষয়ী পরিবেশ। হাসপাতালের কর্মচারীরা পর্যন্ত কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন, কারণ সাফল্যের মাধ্যমে এখানে নতুন ইতিহাস রচিত হবে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা পার্থের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছিলেন। তাদের কাছে উজ্জ্বল এখন এক অনুপ্রেরণার প্রতীক।

অপারেশন শেষে, ডাক্তাররা ঘোষণা করলেন, “কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে। বাবা এবং ছেলে দুজনই সুস্থ আছেন।” হাসপাতালের করিডোরে উজ্জ্বল এবং তাঁর পরিবারের মুখে তখন শুধু আনন্দের ঝিলিক। হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান বলেন, “এই সাফল্য আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এটি প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপন।”

উজ্জ্বল তখন চোখের জল সামলাতে পারেন না। “স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে এত বড়ো অপারেশন করা আমার জন্য অসম্ভব ছিল,” তিনি বলেন। পরীক্ষানিরীক্ষা এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিলে সাত-আট লক্ষ টাকা খরচ হত। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধায় এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাঁদের কাছে সহজ হয়ে যায়।

পরবর্তী কয়েকদিন পার্থ হাসপাতালে থেকে সুস্থতার পথে এগোতে থাকেন। হাসপাতালের নার্স এবং ডাক্তাররা প্রত্যেকেই খুব যত্নের সঙ্গে তাঁকে দেখাশোনা করেন। পার্থ হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভাবেন, কীভাবে তাঁর বাবা তাঁকে জীবন ফিরে দিলেন। এর আগে কখনোই তিনি ভাবতে পারেননি যে বাবা-মার ভালোবাসা এতটা ত্যাগময় হতে পারে।

কয়েকদিন পর পার্থ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বাড়ি ফেরার পথে উজ্জ্বল তাঁকে মৃদু হাসিমুখে বলেন, “দেখলে বাবা, আমি এখনও তোমার সব কাজ করতে পারি।” পার্থ হেসে বলে, “তুমি শুধু কাজ করো না, আমার জীবনও বাঁচাও, বাবা।” বাবা-ছেলের এই বন্ধন যেন সবার চোখে জল এনে দেয়।

বাড়িতে ফিরে আসার পর পার্থ এবং উজ্জ্বলের জন্য সবার মাঝে যেন উৎসবের আমেজ। প্রতিবেশীরা তাঁদের দেখতে আসে, সবার মুখে কেবল একটা কথাই, “উজ্জ্বলদা, আপনি সত্যিই মহান।” উজ্জ্বল হেসে বলেন, “আমার সন্তানের জন্য এইটুকু করতে পারব না তো আর বাবা কেমন!”

পার্থ সুস্থ হয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেন। কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার দিন উজ্জ্বল তাঁর কাঁধে হাত রেখে বলেন, “জীবনে কখনো হাল ছেড়ো না। এই জীবন তোমার দায়িত্ব, তাকে সম্মান দিয়ে বাঁচো।” পার্থ বাবার এই কথা হৃদয়ে ধারণ করে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেন।

এই ঘটনাটি দুর্গাপুরের মানুষদের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের এই ত্যাগ এবং হাসপাতালের সাফল্য কেবল পার্থকেই নয়, পুরো জেলাকেই গর্বিত করে তোলে।

পার্থ এখন নিজে কাজের ফাঁকে বাবার দিকে বেশি খেয়াল রাখেন। সপ্তাহান্তে বাবা-ছেলে একসঙ্গে বসে চা খেতে খেতে কথা বলেন জীবনের নানা বিষয় নিয়ে। তাঁদের বন্ধন যেন আগের থেকেও আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।

আজও তাঁদের পরিবারের কাছে ১৫ সেপ্টেম্বর একটা স্মৃতিময় দিন। এদিন তাঁদের পরিবারের সকলেই মিলে মোমবাতি জ্বালিয়ে পার্থ এবং উজ্জ্বলের জন্য প্রার্থনা করেন, যেন এই সম্পর্কের মাধুর্য চিরকাল অটুট থাকে।

এই গল্প দুর্গাপুরবাসীদের মনে প্রেরণার সঞ্চার করে। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের আত্মত্যাগের এই কাহিনি এখন তাঁদের কাছে একটি উদাহরণ, যা বাবা-ছেলের সম্পর্কের গভীরতা এবং জীবনের প্রতি অবিচল আস্থা উদযাপন করে।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন