HomeStory of WestbengalRobbery: ডাকাতের কবলে বরযাত্রী

Robbery: ডাকাতের কবলে বরযাত্রী

দায়িত্ব নেন সিনিয়র অফিসার তৃণাঙ্কুর রায়

রাতের আকাশে তেমন কোনো তারা নেই। বাঁকুড়ার ঢেঙ্গাশোল জঙ্গলের নিঃসঙ্গ সড়কটি যেন নীরব সাক্ষী ছিল এক অন্যরকম নাটকের। বরযাত্রী বোঝাই বাসটি গতি কমিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সামনের বাঁকে, যখনই চালকের চোখে পড়ে রাস্তায় পড়ে থাকা একটি বড় গাছের গুঁড়ি। হঠাৎই জঙ্গলের ঘন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে মুখ ঢাকা একদল সশস্ত্র ব্যক্তি। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বাসটি থমকে যায়।

দুস্কৃতীরা যাত্রীদের আতঙ্কিত চোখের দিকে তাকিয়ে, আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে, ঠান্ডা গলায় নির্দেশ দেয়, “সব বের কর। টাকা, গয়না—সব!” আতঙ্কে বরযাত্রীরা নিজেদের মূল্যবান সামগ্রী তুলে দিতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, সামনের দিক থেকে আরেকটি লরি থামিয়ে তার মালপত্র লুট করছিল একই দল।

তখনই পুলিশের কাছে খবর পৌঁছায়। বিষ্ণুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবজ্যোতি সেন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান, কিন্তু ততক্ষণে চম্পট দিয়েছে অপরাধীরা। “এটা পরিকল্পিত,” তিনি বললেন। “এদের ধরতে একটা স্পেশাল অপারেশন চালাতে হবে।”

রহস্য উন্মোচনের প্রথম ধাপ

অভিযানের দায়িত্ব নেন সিনিয়র অফিসার তৃণাঙ্কুর রায়। পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। প্রযুক্তির সাহায্যে ও স্থানীয় সূত্রের উপর নির্ভর করে দ্রুত কাজ শুরু হয়। ১ ডিসেম্বরের সকালে দলটি জানতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: সাবেক আলি মোল্লা নামের একজন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।

আলিকে গ্রেফতার করা হয় তার বাড়ি থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে মজিবুর খানের নাম। তিনি ছিলেন পুরো দলের মাস্টারমাইন্ড। তার নেতৃত্বেই সবকিছু সংগঠিত হয়েছিল।

ফাঁদ পাতা হলো জঙ্গলে

মজিবুর ছিল অতিরিক্ত সতর্ক। সে বুঝতে পারছিল পুলিশ তার পিছু নিয়েছে। কিন্তু সে জানত না যে পুলিশ ইতোমধ্যেই তার গতিবিধি নজরদারিতে রেখেছে। আধকাটা জঙ্গলের গভীরে তার লুকানোর জায়গা চিহ্নিত হয়।

ডিসেম্বরের ঠান্ডা রাতে পুলিশের একটি দল চুপিসারে জঙ্গলের চারপাশে অবস্থান নেয়। আধিকারিক দেবজ্যোতি সেনের নেতৃত্বে দলটি সশস্ত্র এবং প্রস্তুত ছিল। রাত ১০টা নাগাদ, মজিবুর তার বাইকে করে আসার সময়, হঠাৎই তার পথ আটকে দাঁড়ায় একদল পুলিশ।

“মজিবুর খান! পুলিশ!” চিৎকার করে নির্দেশ দেন দেবজ্যোতি। পালানোর চেষ্টা করলেও চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। তার বাইক থেকে উদ্ধার হয় একটি ইম্প্রোভাইসড ওয়ান শর্টার এবং তাজা কার্তুজ।

পতনের পর

মজিবুরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ তার ১০ দিনের হেফাজত চায়, কারণ এখনও এই চক্রের আরও সদস্যের সন্ধান বাকি।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় মজিবুর একদিকে চুপ, অন্যদিকে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল, “সবাইকে ধরতে পারবে না।” তবে পুলিশের কাছে এখন অনেক তথ্য রয়েছে এবং তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই চক্রকে পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে।

শেষ কথা

এই অভিযান শুধু একটি লুটের ঘটনার সমাপ্তি নয়; বরং পুলিশের দক্ষতা ও সাহসিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। গাছের গুঁড়ি ফেলে অপরাধ করার যে পরিকল্পনা, তা ধুলিসাৎ হয়ে যায়। রাতের জঙ্গল, বরযাত্রীদের আতঙ্ক, এবং পুলিশের গোপন অভিযান সবকিছু মিলিয়ে এই কাহিনি যেন সিনেমার পর্দা থেকে বাস্তবে উঠে আসা এক থ্রিলার।

বিঃ দ্রঃ – বাঁকুড়ার সত্যি ঘটনার অবলম্বনে লিখিত এই গল্পটি।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন