Homeহুগলীবঙ্গে ছানা আসে পর্তুগীজ দের হাত ধরেই

বঙ্গে ছানা আসে পর্তুগীজ দের হাত ধরেই

বৈদিক যুগে ছানা খাওয়া হত না।

তারকেশ্বর TV: জানেন কি পর্তুগিজদের থেকেই ছানা তৈরির প্রক্রিয়া শেখে বাঙালি? একসময় হুগলির ব্যান্ডেল ছিল পর্তুগিজদের প্রধান ঘাঁটি।

বৈদিক যুগে ছানা খাওয়া হত না। দই, মাখন, ক্ষীর ইত্যাদি ছিল দুধের সাধারণ রূপ। যদিও পর্তুগিজরা ছানার  প্রবর্তন করেছিল, এটি দুধের একটি বিকৃত সংস্করণ হিসাবে দেখা হতো। ব্রাহ্মণরা ছানাগুলিকে ‘অশাস্ত্রীয়’ বলে মনে করতেন এবং পূজার সময় সেগুলি নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ, দুধ ‘ছিন্ন’ হয়ে তৈরি হয় ছানা। ‘ছানা’ শব্দটাও এসেছে ছিন্ন থেকে। যা কিছু নষ্ট হয়ে যায় তা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা যায় না, এটি খাদ্য হিসাবে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে। দেবতাদের দেওয়া ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নটি হ’ল ক্ষীর থেকে তৈরি পেঁড়া, যা দুধ ঘন করে প্রস্তুত করা হয়। দুধ জল দিয়ে অতি ঘন করে তৈরি হয় ক্ষীর। আর দুধ কেটে গেলে বা ছিন্ন হলে সেটি হয় ছানা। সে সময় তাই হিন্দু দের কাছে ছানা অতটা বিখ্যাত ছিল না।

১৫৪০ সালে পর্তুগিজরা হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ব্যান্ডেলে একটি কুঠি স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্য শুরু করে। তাদের খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল ছানা থেকে তৈরি ‘চিজ’। এই পনির ‘পট চিজ’ বা ‘কটেজ চিজ’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে, মধ্য ইউরোপে, ‘কোয়ার্ক’ নামে পরিচিত এক ধরণের খাবার রয়েছে যা ‘কটেজ চিজ’ এর মতো নরম, সাদা এবং তাজা অবস্থায় খাওয়া হয়। বাংলায় পনিরের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যান্ডেল চিজ’। এটি অঞ্চলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

ওলন্দাজরা ব্যান্ডেলের পার্শ্ববর্তী শহরে বসতি স্থাপন করে। সময়ের সাথে সাথে, তারাও ‘ব্যান্ডেল চিজ’ এর ভক্ত হয়ে ওঠে। ডাচ রান্নাঘরে অসংখ্য স্থানীয় শেফ ছিলেন, যারা ডাচদের কাছ থেকে ‘ব্যান্ডেল চিজ’ তৈরির জ্ঞানও অর্জন করেছিলেন। ‘ব্যান্ডেল চিজ’ তৈরির প্রক্রিয়া অনেকটা ছানা তৈরির মতোই। তাদের সৃজনশীলতা ও চিনিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী তৈরি করেন নানা রকম মিষ্টি। বিশেষ করে সন্দেশ তৈরি করতেন। অবশেষে ছানা থেকে তৈরি সন্দেশ বাংলা হয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন