HomeInspirational StoryAlipurduar: পা ধোয়ানো প্রদীপ

Alipurduar: পা ধোয়ানো প্রদীপ

মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মানের এমন নজির আজকের সমাজে বিরল।

নতুন বছরের সকাল। আলিপুরদুয়ার শহরের এক ছোট্ট গলি থেকে ভেসে আসছে মৃদু ধূপের গন্ধ আর শঙ্খধ্বনি। প্রদীপকুমার সরকারের বাড়ির সামনে বেশ ভিড় জমেছে। সামনে সারি বেঁধে বসে আছেন এলাকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। লাল বসনে সজ্জিত প্রদীপবাবু নিজে তাঁদের পা ধুইয়ে দিচ্ছেন। গলায় মালা, কপালে চন্দনের ফোঁটা— যেন ঈশ্বরকে আরাধনার বিশেষ মুহূর্ত। তবে এখানে ভগবানের মূর্তি নেই, বরং মানুষই ভগবান।

এই অসাধারণ ঘটনার উদ্যোক্তা প্রদীপকুমার সরকার। পেশায় একজন ব্যবসায়ী, কিন্তু তাঁর প্রকৃত পরিচয় তাঁর মানবসেবার এই উদ্যোগ। সাত বছর ধরে প্রতিবছর ১ জানুয়ারির দিন তিনি দুঃস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুজো করে নতুন বছরের সূচনা করেন। তাঁর এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের অমর বাণী: “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”

পুজো শুরু

সকাল থেকেই বাড়ির আঙিনায় ভিড় জমেছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বসতে দেওয়া হয়েছে পরিপাটি চেয়ারে। তাঁদের সামনে রাখা হয়েছে গঙ্গাজল, ধূপধুনো, ফুল। প্রদীপবাবু নিজে প্রথমে তাঁদের পা ধুইয়ে দেন। কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে শুরু হয় পূজা। এরপর গলায় মালা পরিয়ে একে একে সবাইকে বরণ করে নেওয়া হয়।

“আমরা তো কেউ নই,” আবেগভরা কণ্ঠে বললেন ৮০ বছরের কুমারী রায়। “প্রদীপবাবু আমাদের যে সম্মান দেন, তাতে মনে হয় সত্যিই ভগবান আমাদের মধ্যেই রয়েছেন।”

অন্নভোগ ও খুশির পরিবেশ

পুজোর শেষে শুরু হয় অন্নভোগ। ভোগে ভাত, ডাল, তরকারি থেকে শুরু করে পায়েস, মিষ্টি—কোনো কিছুতেই কমতি নেই। প্রদীপবাবু বলেন, “মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ আমরা করি, তা আমাদেরই সৃষ্টি। এই দিনটা আমি চেয়েছি এমন হোক যেখানে সবাই একসঙ্গে বসে খেতে পারেন, একসঙ্গে ভালোবাসার ভাগ নিতে পারেন।”

খাওয়া শেষে প্রত্যেককে দেওয়া হয় একটি করে কম্বল। শীতের এই দিনগুলোয় সেটি যেন তাঁদের আরামের একমাত্র ভরসা।

শহরের প্রশংসা

এই মানবপুজো অনুষ্ঠানে শুধু দুঃস্থরাই নন, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালও। “এমন উদ্যোগ আজকের দিনে সত্যিই বিরল,” বললেন তিনি। “প্রদীপবাবু যা করছেন, তা মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।”

মানবতার আলোকবর্তিকা

প্রদীপকুমার সরকার শুধু একা নন, তাঁর এই কাজের সঙ্গে ধীরে ধীরে আরও অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন। মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মানের এমন নজির আজকের সমাজে বিরল। প্রদীপবাবুর এই প্রচেষ্টা যেন নতুন বছরে সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

প্রদীপবাবুর ভাষায়, “আমার লক্ষ্য একটাই—সবাই যেন মনে করেন আমরা এক। মানবসেবার মাধ্যমেই ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব। আর এভাবেই জীবনের তৃপ্তি আসে।”

এ যেন এক নতুন ধরনের পূজা, যেখানে দেবতা আসলে আমরা নিজেরাই।

বিঃদ্রঃ – আলিপুরদুয়ারের কাহিনী অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন