সুমিতের ঘুম ভাঙল চোখের সামনে ভেসে ওঠা নোটিফিকেশন দেখে—
“গুড মর্নিং, সুমিত! আজকের তাপমাত্রা ২৫°C, রোদের তেজ থাকবে বেশি। সকাল ১০টায় মিটিং রয়েছে। কফি বানিয়ে নিন?”
সে জানে, এসব কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়। তার চোখে থাকা “মেটা ভিশন গ্লাস”-এর জন্যই সব সম্ভব হচ্ছে। একসময় মোবাইল ফোন ছিল মানুষের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী, কিন্তু গত ৫ বছরে এই স্মার্ট গ্লাস প্রযুক্তি পুরো বিশ্বটাকে বদলে দিয়েছে। ফোন নামের বস্তুটা এখন জাদুঘরে জায়গা নিয়েছে।
সুমিত বিছানা ছাড়তেই তার গ্লাস নিজে থেকেই তার অ্যাপার্টমেন্টের কফি মেশিনে সিগন্যাল পাঠাল। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই গরম কফির সুগন্ধে ভরে গেল ঘর।
হাতে কোনো ডিভাইস নেই, পকেটে মোবাইল নেই, তবু সে এক নিমেষে সমস্ত তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। অফিসের ফাইল, মিটিং নোটস, ইমেইল—সব কিছুই চোখের সামনে ভাসছে। হাত নাড়িয়ে সে তার নোটস ঘাটল, মিটিংয়ের সময় এগিয়ে আনার জন্য “ভিশন কন্ট্রোল”-এ নির্দেশ পাঠাল।
তবে একটা জিনিস সে আজও ভুলতে পারেনি—তার শেষ ফোনকল।
৫ বছর আগের সেই দিন…
সেদিনও ঠিক এমনই একটা সকাল ছিল। সে ব্যস্ত ছিল কাজে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল—
“মা ফোন করছেন…”
সে তখন অফিসের মিটিংয়ে ব্যস্ত, তাই ভেবেছিল পরে ফোন করবে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর যখন সে কলব্যাক করল, তখন আর ওপাশ থেকে কেউ ধরল না। কয়েক ঘণ্টা পর খবর এল—হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন মা।
তারপরই এলো স্মার্ট গ্লাসের যুগ। ফোন হারিয়ে গেল, বদলে গেল যোগাযোগের মাধ্যম। কিন্তু তার সেই শেষ ফোনকল আর ফিরল না।
বর্তমান…
গ্লাসে ভেসে উঠল আরেকটি নতুন নোটিফিকেশন—
“ড্যাড কলিং…”
এক সেকেন্ডও দেরি না করে সে বলল, “রিসিভ করুন।”
এক মুহূর্ত পর বাবার গলা শুনতে পেল সে, “সুমিত, কেমন আছিস বাবা?”
চোখ বেয়ে একটা ফোঁটা জল নেমে এল। প্রযুক্তি যতই বদলাক, কিছু অনুভূতি কখনও বদলায় না…
বিঃ দ্রঃ – টেকনলজি বিপ্লবের ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেই নিয়ে একটি কাল্পনিক গল্প কাহিনী।
|| সমাপ্ত ||