চন্দননগরের এক শান্ত সকালে মহকুমাশাসকের দফতর এলাকায় শুরু হয়েছিল এক অদ্ভুত চাঞ্চল্য। রানিঘাটের উল্টো দিকে অবস্থিত এই দফতরের সিঁড়ির পাশে পড়ে থাকা কাগজপত্র আর টিনের বাক্সের স্তূপে বসবাস করছিল কিছু অজানা অতিথি—কালো, লম্বা, আর বিষে ভরা দুটি কালাচ সাপ। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, নদীর কাছাকাছি অবস্থান আর আশ্রয় খোঁজার তাগিদেই হয়তো গঙ্গা থেকে উঠে এসেছিল ওরা।
গুজব আর সন্দেহের ডালপালা মেলতে বেশি সময় লাগেনি। কোনোভাবে স্থানীয় কর্মীরা জানতে পারেন, এই জায়গায় একটা নয়, বরং বেশ কয়েকটি সাপ থাকতে পারে। এরপরই এসডিও অফিসে চাঞ্চল্য আরও বেড়ে যায়, আর সেখানকার লোকজন দ্রুত সাপ উদ্ধারকারীদের খবর পাঠান।
দু’দিন পর সাপ ধরার পেশাদার চন্দন ক্লেমেন্ট সিংহ সেখানে পৌঁছালেন, সঙ্গে তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এলাকায় নাম ছিল চন্দনের। অদ্ভুত সাহস আর নির্ভুল কৌশল ছিল তার হাতিয়ার। তিনি বুঝলেন, কালাচ ধরা সহজ হবে না; কালাচের দ্রুত গতি আর বিষাক্ত ছোবলের খ্যাতি ছিল প্রচলিত।
প্রথমে তন্ন তন্ন করে খুঁজে একটিই চিতি বোরা সাপ উদ্ধার করেন চন্দন, যা দেখে কর্মীরা মনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, এরপরই তারা জানালেন, আরও সাপ থাকতে পারে। চন্দন আবার সতর্ক হয়ে পরিস্থিতি যাচাই করতে লাগলেন।
শনিবার সকালে, সকলের উত্তেজনা আর উদ্বেগের মধ্যেই, সেই সিঁড়ির নীচে পুরনো টিনের বাক্সের মধ্যে দেখতে পান সেই দুটি কালাচ সাপ—একটি তার কালো-চকচকে শরীর নিয়ে বাক্সের কোণে কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে, আর অন্যটি সামান্য নড়েচড়ে উঠছে। মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন সবাই। কালাচের উপস্থিতি মানেই ভয়ানক বিষের সম্ভাবনা, আর সেটি এত কাছে!
কর্মীরা দূর থেকে কৌতূহল আর শঙ্কা নিয়ে দেখছিলেন। চন্দন একটু ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে সাপ দুটিকে তাঁর বিশেষ সরঞ্জামের সাহায্যে বের করে আনলেন। প্রত্যেকে অবাক হয়ে দেখল, কীভাবে সাপ ধরার প্রতিটি মুহূর্তে চন্দনের একাগ্রতা আর সাহস অবিচল ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে সাপ দুটিকে নির্দিষ্টভাবে আটকে, এলাকাটিকে আবার নিরাপদ করলেন।
সাপ দুটির উপস্থিতি নিয়ে চন্দন জানালেন, “এসব সাপ নদীর কাছাকাছি থাকা জায়গায় আশ্রয় খোঁজে, আর হয়তো পরিত্যক্ত জায়গায় উষ্ণতার টানেই এসে গিয়েছিল।” কর্মীদের চোখেমুখে আতঙ্ক ধীরে ধীরে কৌতূহলে পরিণত হচ্ছিল। চন্দন ও তার সাহসিকতার প্রশংসায় সবাই মুগ্ধ।
চন্দনের সাপ উদ্ধার অভিযান সফল হওয়ায় চন্দননগরের বাসিন্দারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও, এই ঘটনা তাদের জীবনে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে রইল, আর তার সাহসিকতাও যেন এলাকাবাসীর মনে জায়গা করে নিল।
|| সমাপ্ত ||
________