বীরভূমের সিউড়ি এলাকার বিদেশি পাড়ার রাতগুলো এখন অন্যরকম। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত শব্দ। শব্দটা কেমন? যেন ভারী কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ, তার সঙ্গে মিলিয়ে তীক্ষ্ণ সুরে একটা হাওয়ার ঝাঁপটা। শব্দ শোনার পর গ্রামবাসীরা ছাদে উঠে দেখতে যান, কিন্তু কিছুই দেখতে পান না।
রহস্যের শুরু
প্রথম দু-একদিন কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। হয়তো কোনও বন্য প্রাণী, নয়তো হাওয়ার কোনও খেলা। কিন্তু যখন এটা রোজ ঘটতে লাগল, তখন আতঙ্ক বাড়তে শুরু করল। রাত নামার আগে গ্রামের মহিলারা দরজা-জানলা শক্ত করে বন্ধ করতে শুরু করলেন। পুরুষেরা লাঠি হাতে পাহারা দিতে লাগলেন। পাড়ার ছেলেরা মিলে দল গঠন করে রাস্তায় টহল দিলেও, কোনও কিছুর দেখা নেই। তবু, ছাদের ওই শব্দ থামে না।
পুলিশের অসহায়তা
গ্রামবাসীদের অনুরোধে সিউড়ি থানার পুলিশ কয়েকবার এলাকায় টহল দিয়েছে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার, পুলিশ আসার রাতে সেই শব্দ একবারের জন্যও শোনা যায়নি। পুলিশ চলে গেলে আবার শুরু হয়। যেন কোনও বুদ্ধিমান শত্রু লুকিয়ে রয়েছে তাদের মধ্যেই।
অজ্ঞাত আতঙ্ক
এক রাতে, গ্রামের প্রবীণ লোকটিকে দেখা গেল লাঠি হাতে গ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তার চেহারা চিন্তিত। “এই শব্দটা আমি ছোটবেলায় শুনেছিলাম,” তিনি বললেন, “তখন দাদুরা বলত, এটা ‘রাতচোরের ছায়া’। ওরা কিছু চুরি করে না, কিন্তু গ্রামের লোকদের ভয় দেখিয়ে শক্তি নেয়। একবার চোখে পড়লে, ওরা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ছায়াকে দেখতে পাওয়া খুব কঠিন।”
পাড়ার ছেলে রমেশের অভিজ্ঞতা
তবে ঘটনার মোড় ঘুরল রমেশ নামে এক তরুণের কারণে। এক রাতে সাহস করে সে নিজের ছাদে লুকিয়ে রইল। শব্দ শুরু হতেই, হাতে থাকা টর্চ জ্বালিয়ে সে দেখতে পেল ছায়ামতো কিছু, যেন একটা হালকা ধোঁয়ার মতো গড়ন, ছাদের কিনারা দিয়ে পিছলে পড়ে গেল। রমেশ চিৎকার করে সবাইকে ডাকল। ছুটে এল গ্রামবাসীরা। কিন্তু সেই ছায়ার আর কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না।
পরিণতি
গ্রামবাসীদের বিশ্বাস জন্মাল, এটা কোনও অপদেবতা। মন্দিরের পুরোহিত এসে গ্রামে যজ্ঞ করলেন। সেই রাত থেকে শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। তবে পাড়ার মানুষ এখনও রাতে ছাদে একা যেতে ভয় পান। রমেশ মাঝে মাঝে বলে, “ওটা কোনও অপদেবতা নয়, কিন্তু ও কি ছিল, সেটাও জানি না। হয়তো কেউ গ্রামে ঢুকে সবার মনের ওপর খেলা খেলছিল।”
বীরভূমের বিদেশি পাড়ার রাত আজও নিঃশব্দ, কিন্তু এক রহস্যময় ইতিহাস হয়ে রয়ে গেছে মানুষের মনে।
বিঃ দ্রঃ – বীরভূমের ঘটনার কাল্পনিক কাহিনী।
|| সমাপ্ত ||
________