HomeAllTarapith: মা তারার নতুন ভোর

Tarapith: মা তারার নতুন ভোর

নতুন নিয়মের পেছনের রয়েছে এই ভাবনা

পৌষ মাসের প্রথম দিন। ঠান্ডা কুয়াশায় মোড়া ভোরের আলোয় যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে তারাপীঠ মন্দিরে। মা তারার ভক্তদের আনাগোনায় পূর্ণ মন্দির প্রাঙ্গণ আজ আরও একটু গোছানো, একটু বেশি নিয়মবদ্ধ। এই দিন থেকেই চালু হয়েছে নতুন নিয়ম, যা ভক্তদের সুবিধা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশের জন্য প্রণীত।

নতুন নিয়মের ঘোষণা

তারাপীঠ মন্দির চত্বরে সকাল থেকেই মাইকে ঘোষণা চলছে।
“ভক্তদের অনুরোধ করা হচ্ছে নতুন নিয়ম মেনে চলার জন্য। গর্ভগৃহে গোলাপজল বা আলতা দেওয়া যাবে না। মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। ভক্তরা মা তারার চরণ স্পর্শ করতে পারবেন, কিন্তু প্রতিমাকে জড়িয়ে ধরা যাবে না।”

যাঁরা বারবার তারাপীঠে আসেন, তাঁদের কাছে কিছু নিয়ম বিস্ময়ের হলেও অধিকাংশ ভক্ত একে স্বাগত জানিয়েছেন। মন্দির চত্বরে জড়ো হওয়া মানুষজনের মধ্যে নতুন নিয়ম নিয়ে চর্চা চলছিল। কেউ বলছিলেন, “এই নিয়ম তো খুব ভালো হয়েছে। গর্ভগৃহে অতিরিক্ত ভিড় কমবে।” আবার কেউ বলছিলেন, “মোবাইল নিষিদ্ধ হওয়াটা একটু কঠিন হলো।”

ভক্তদের ঢল ও দুই লাইনের ব্যবস্থা

আজ সকালে ভক্তদের জন্য দু’টি আলাদা লাইন দেখা গেল। একদিকে সাধারণ ভক্তদের জন্য “জেনারেল লাইন,” অন্যদিকে বিশেষ দানকারীদের জন্য “বিশেষ লাইন”। সকাল সাতটায় জেনারেল লাইন খুলে দেওয়া হলো, আর তার এক ঘণ্টা পরে খোলা হলো বিশেষ লাইন।
কলকাতার বাসিন্দা গৌরব মিত্র, যিনি প্রতি বছরই কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ আসেন, বললেন, “এতদিন লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যেত। এবার দু’টি লাইন হওয়ায় ভালো লাগছে।”

গর্ভগৃহে শৃঙ্খলা

মন্দিরের গর্ভগৃহে এখন গোলাপজল ও আলতা দেওয়া নিষিদ্ধ। অনেকেই শুরুর দিকে অসন্তুষ্ট হলেও, সেবাইতরা বোঝালেন যে এগুলো প্রতিমার ক্ষতি করে। মা তারার পবিত্র চরণে ভক্তরা প্রণাম করতে পারলেও প্রতিমাকে স্পর্শ করা যাবে না। সেবাইত অরূপ চক্রবর্তী বললেন, “মা তারার রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই এই ব্যবস্থা। ভক্তরা যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে সবার জন্যই সুবিধা হবে।”

মোবাইল নিষিদ্ধের প্রভাব

মন্দিরে মোবাইল নিষিদ্ধ করার নতুন নিয়মটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। মন্দির চত্বরে প্রবেশের আগে ভক্তদের মোবাইল জমা দিতে হচ্ছে। বিনয় সর্দার নামে এক যুবক জানালেন, “মোবাইল ছাড়া থাকার অভ্যাস নেই। তবে ভক্তি আর শৃঙ্খলার জন্য এটা মেনে নিতেই হবে।”

নতুন নিয়মের পেছনের ভাবনা

মন্দির কমিটির সভাপতি শ্যামল দাস জানান, “এতদিন মন্দিরে অনিয়ম বেড়ে গিয়েছিল। একদিকে ভক্তদের নিরাপত্তা, অন্যদিকে মায়ের প্রতিমার সুরক্ষা—এই দু’টি বিষয় মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

শান্তি ও শৃঙ্খলার দিশা

দুপুরের দিকে ভক্তদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। নতুন নিয়মের মধ্যে থেকেও সবাই মা তারার দর্শন করতে পেরে খুশি। এক বৃদ্ধা, যিনি মানতের পুজো দিতে এসেছেন, বললেন, “মা তারার আশীর্বাদে সব ভালো হবে। নিয়ম তো ভক্তদের জন্যই।”

তারাপীঠে আজ যে শৃঙ্খলার বাতাস বইছে, তা যেন এক নতুন ভোরের ইঙ্গিত। ভক্তি আর নিয়মের সমন্বয়ে মা তারার পীঠ আবার এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে।

বিঃদ্রঃ – তারাপীঠের নতুন নিয়ম নিয়ে লেখা এই গল্প।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন