তারকেশ্বর TV: চলতি বাজেটে রাজ্য সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প কন্যাশ্রীর বরাদ্দ কমেছে। ফলে ‘দানশীলতার’ রাজনীতির কারণে মেয়েদের শিক্ষার প্রসার ও বাল্যবিবাহ রোধের প্রকল্পটি উপেক্ষিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অর্থ বিভাগ আগামী আর্থিক বছরে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য ১,৩৭৪.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা ২০২৩-২৪ সালে ছিল ১,৫৫০.১৩ কোটি টাকা। বীরভূমের কিছু শিক্ষক আশঙ্কা করছেন যে বরাদ্দের এই হ্রাস অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ বৃদ্ধি করতে পারে।
শুধু এই প্রকল্পে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বাড়বে, এমনটা মনে করছেন না শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি বড় অংশ। তাঁদের মতে, বীরভূমের পরিস্থিতি তো এমনিতেই ভয়াবহ। অনেক স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব রয়েছে। তবে নাবালিকা বিয়ে রুখতে ওই ক্লাবের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এমন উদাহরণ হাতেগোনা। যেটুকু হয়েছে সেটিও অতিমারির আগে। কোভিডের পরে পরিস্থিতি বরং ক্রমাগত আরও খারাপের দিকেই এগিয়েছে।
তবে কন্যাশ্রী ক্লাবগুলি সজাগ থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত বলে ধারণা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কন্যাশ্রী প্রকল্প (কে-১) পেয়েছে জেলার ৯৪৯৬৮ জন ছাত্রী, কে-২ পেয়েছেন ১৮৪৩৭ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে আড়ালে মানছেন, কন্যাশ্রী ক্লাব গঠন, নানা কর্মসূচি পালন বাল্যবিবাহ আটকাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়নি। আসলে কমবয়সি মেয়েদের বাল্যবিবাহের কুপ্রভাব নিয়ে সচেতনই করা যাচ্ছে না।
জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের মতে, একথা সত্যি যে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য মেয়েদের স্কুলে আসার প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। প্রতি বছর মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সেটাই প্রমাণ করে। তাঁরা জানান, একটি ছাত্রী কন্যাশ্রী তখনই পেতে পারে যদি সে নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকে। এ ছাড়া ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত থাকলে তবেই কে-২ প্রকল্পের এককালীন ২৫ হাজার টাকা পেতে পারে সে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। নিয়মের ফাঁক গলে বিয়ের পরেও কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছে অনেক ছাত্রী বলেও আড়ালে মানছেন তাঁরা।
একজন ছাত্রী ১৮ বছর পর্যন্ত অবিবাহিত এই মর্মে শংসাপত্র প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিয়ের পরেও কোনও ভাবে অনেকেই সেই শংসাপত্র জোগাড় করে ফেলে। এই প্রবণতা আটকাতে কে-২ পেতে ব্লকে উপস্থিত হতে হয় ছাত্রীকে। কিন্তু স্বামীকে আত্মীয় সাজিয়ে দিব্যি সে কাজও চলে যাচ্ছে।
________