রাত তখন বারোটা। তৃষা তার ফোনে স্ক্রল করছিল। একটি ফ্যাশন ব্লগের পেজ খুলতেই হঠাৎ অদ্ভুত কিছু বিজ্ঞাপন স্ক্রিনে ভেসে উঠল। জ্বলজ্বলে রঙিন বিজ্ঞাপনে বড় করে লেখা, “ক্লিক করুন এবং মোবাইল জিতুন!”। বিরক্ত হয়ে সে ব্রাউজার বন্ধ করল, কিন্তু পরের মুহূর্তে ফোনের স্ক্রিন আবার আলোকিত হলো।
“এটা আবার কী?” ফিসফিস করে বলল তৃষা।
এত রাতে তৃষার ফোনে এমন বিজ্ঞাপন কখনও আসেনি। তবে ঘটনাটি তখনই তাকে বড় কিছু ভাবায়নি। কিন্তু পরের দিন সকালে সে লক্ষ্য করল ফোনে একটি অদ্ভুত অ্যাপ ইনস্টল করা হয়েছে—“SpyView Tracker”। অ্যাপটির নাম সে আগে কখনো শোনেনি।
অদ্ভুত ঘটনা শুরু
সেই দিন থেকেই তৃষার ফোনে কিছু অস্বাভাবিক বিষয় ঘটতে শুরু করল। ফোন ব্যবহার না করলেও ব্যাটারি যেন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। ফ্রন্ট ক্যামেরার পাশে ছোট্ট সবুজ একটি লাইট জ্বলছে, অথচ ক্যামেরা তো চালু নেই।
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে তৃষা দেখল, ফোনের স্ক্রিন নিজে থেকেই চালু হয়ে গেছে। স্ক্রিনে কোনো অজানা মেসেজ বক্স খুলে আছে। তার মনে হলো যেন কেউ তার ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেখেছে।
বিষয়টি অস্বাভাবিক ঠেকলেও, ভয় এবং অনভিজ্ঞতার কারণে তৃষা কাউকে কিছু বলল না। তবে সমস্যাগুলো দিনে দিনে বাড়তে লাগল। তার ব্যাংকের অ্যাপ থেকে একটি অদ্ভুত লেনদেনের নোটিফিকেশন এলো। কিন্তু সে কখনো ওই লেনদেন করেনি।
সত্যের মুখোমুখি
তৃষা তখন বিষয়টি নিয়ে তার বন্ধু অর্ণবের সঙ্গে আলোচনা করল। অর্ণব একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট। ঘটনাগুলো শুনে সে একটু থমকে গেল।
“তৃষা, তোমার ফোন হ্যাকড হয়েছে,” বলল অর্ণব।
“কী? কী করে হলো এটা?” তৃষার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
অর্ণব বিষয়টি বুঝিয়ে বলল। “ক্লিকবেট বিজ্ঞাপন, অজানা অ্যাপ ইনস্টল, ক্যামেরার লাইট অন থাকা—এসবই স্পষ্ট লক্ষণ যে তোমার ফোনে কোনো ম্যালওয়্যার ঢুকে গেছে। এই ম্যালওয়্যার হয়তো তোমার সব তথ্য চুরি করছে।”
সমস্যার সমাধান
অর্ণব পরামর্শ দিল, “তোমার যা যা করা দরকার:
১. অবিলম্বে সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলাও।
২. অচেনা অ্যাপগুলো ডিলিট কর।
৩. ফোনকে ফ্যাক্টরি রিসেট করো। তবে তার আগে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ব্যাকআপ নিয়ে রাখো।
৪. ভবিষ্যতে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার আগে সাবধান হবে।”
তৃষা কথা মতো কাজ করল। ফ্যাক্টরি রিসেটের পর ফোনে নতুন অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করল। এরপর থেকে সে আরও সচেতন হয়ে গেল।
সতর্কবার্তা
এই অভিজ্ঞতার পর তৃষা বুঝেছিল, প্রযুক্তি যত আধুনিক হচ্ছে, ততই এর সঙ্গে বাড়ছে সাইবার ঝুঁকির ভয়।
তৃষার গল্পের শেষে তার বার্তা ছিল সবার জন্য:
“আপনার ফোনে হঠাৎ অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই সাবধান হোন। পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখুন, কোনো সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। আর কখনো হ্যাক হলে ভয় পাবেন না, দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। কারণ আপনার ডেটা, আপনার নিরাপত্তা।”
তৃষার এই সতর্কবার্তা যেন সবার কানেই পৌঁছায়, কারণ প্রযুক্তির সুবিধা পেতে হলে এর ঝুঁকি সামলানোর ক্ষমতা আমাদের নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।
|| সমাপ্ত ||
________