HomeInspirational StoryKharagpur: মুখই জখন টাইপ রাইটার

Kharagpur: মুখই জখন টাইপ রাইটার

স্বপ্ন পূরণে নিজের সমস্তটা ঢেলে দাও

খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসের এক কোণে ছোট্ট একটি ঘরে বসে তুহিন দে গভীর মনোযোগে পড়াশোনা করছিলেন। সামনে ছড়িয়ে ছিল বই, নোটবুক, আর তার প্রিয় ল্যাপটপ। কিন্তু তার পড়ার ভঙ্গি যে কারও কাছেই ব্যতিক্রমী। পেন-পেন্সিল হাতে না ধরে মুখে দিয়ে লিখছেন তিনি। তার চোখে ছিল এক দৃষ্টিনন্দন জেদ।

তুহিনের জীবন সহজ ছিল না। জন্ম থেকেই তার হাত-পা অচল। অন্যের সাহায্য ছাড়া বসাও অসম্ভব। কিন্তু তুহিন কখনো এই সীমাবদ্ধতাকে নিজের জীবনের অন্তরায় হতে দেননি। তার একটাই লক্ষ্য—জ্ঞান অর্জন এবং মহাকাশ নিয়ে গবেষণা।

শৈশবের সংগ্রাম

তুহিনের মা সুজাতা তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ছেলের পাশে থেকেছেন। “আমার ছেলে তো শুধু বেঁচে থাকেনি, জীবনের প্রতিটা চ্যালেঞ্জকে জয় করেছে,” বলতেন তিনি। তুহিন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। খড়গপুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি তার ক্লাসের সেরা ছাত্র ছিলেন। তবে পরীক্ষার সময় তার পদ্ধতি অন্যদের থেকে আলাদা ছিল। মুখ দিয়ে পেন ধরে নিজের সমস্ত উত্তর লিখতেন। শিক্ষকেরা শুধু পাতা ওল্টাতে সাহায্য করতেন।

বিশ্বাসের শক্তি

মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, তারপর শিবপুরে কম্পিউটার সায়েন্সে বি.টেক। তুহিনের প্রতিটি ধাপে ছিল কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি। শিবপুরের ক্লাসমেটরা প্রথমে অবাক হলেও তুহিনের কাজ দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেত। শুধু মুখ দিয়েই টাইপ করে, প্রোগ্রামিং করে এবং বিভিন্ন কোড লিখে তুহিন বুঝিয়ে দিতেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই মেধার মাপকাঠি নয়।

৫০ লক্ষের চাকরির প্রস্তাব

বেশ কয়েকবার তুহিনকে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার সময় তার চোখেমুখে ছিল গর্ব। কিন্তু তুহিনের এই সাফল্যের শিখর আসলেই স্পষ্ট হলো যখন কলেজ ক্যাম্পাসিং-এ তার কাছে এক আমেরিকান ব্যাঙ্ক ৫০ লক্ষ টাকার চাকরির প্রস্তাব দিল।

সবার মনে হলো, এত বড় প্রস্তাব নিশ্চয় তুহিন গ্রহণ করবেন। কিন্তু তুহিন শান্ত স্বরে জানালেন, “চাকরি নয়, আমার লক্ষ্য আরও বড়। আমি মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে চাই। স্পেসশিপ নিয়ে কাজ করতে চাই। এই চাকরি আমার লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হতে পারে।”

পরবর্তী লক্ষ্য

তুহিন এখন এম.টেক প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার স্বপ্ন স্পষ্ট—একদিন সে এমন একটি স্পেসশিপ তৈরি করবে যা মানব সভ্যতাকে মহাবিশ্বের আরও গভীরে নিয়ে যাবে।

প্রেরণার বাতিঘর

তুহিনের সংগ্রামী জীবন শুধু তার নিজের নয়, হাজারো মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। সীমাবদ্ধতাকে জয় করার এক জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন বলে, “স্বপ্ন দেখো, এবং সেই স্বপ্ন পূরণে নিজের সমস্তটা ঢেলে দাও।”

শেষ কথা

তুহিন হয়তো এখনো কারও সাহায্য ছাড়া নিজের খাবার খেতে পারেন না, কিন্তু তার মনোভাব স্পষ্ট করে দেয়, মানুষের প্রকৃত শক্তি তার শরীরে নয়, তার মস্তিষ্কে। তার মা সুজাতা বলেন, “আমার ছেলে তো শুধু নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করেনি, সে সারা পৃথিবীর কাছে একটা উদাহরণ হয়ে উঠেছে।”

এই গল্প শুধু তুহিনের নয়, এটা প্রতিটি মানুষের গল্প, যারা শিখতে চায়, বাঁচতে চায় এবং নিজেদের স্বপ্নপূরণ করতে চায়।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন