HomeStory of WestbengalKatwa: শিব রাত্রিতে নিথর জীবন

Katwa: শিব রাত্রিতে নিথর জীবন

বেরিয়ে এল আতঙ্কিত আর্তনাদ—"বাঁচাও!"

শিবরাত্রির সকালে ভাগীরথীর পাড়ে ভিড় জমেছিল। সকাল থেকেই স্নানের ঢল নেমেছিল ঘাটে। দাঁইহাট-মাটিয়ারি ফেরিঘাটে তিন বন্ধু—সুমন, অর্ঘ্য আর অরুণ—এসেছিল পবিত্র স্নান সারতে।

অরুণ নদীর পাড়ে বসে মোবাইলে মগ্ন, আর সুমন-অর্ঘ্য আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ল জলে। নদীর জল স্নিগ্ধ, ঠান্ডা, শান্ত। দুজনই ডুবসাঁতার কাটতে লাগল, হেসে উঠল, কিশোরসুলভ ছেলেমানুষিতে মেতে উঠল।

হঠাৎই শান্ত নদী ভয়ংকর রূপ নিল। অর্ঘ্য আচমকা তলিয়ে যেতে লাগল। সে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াল, মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল আতঙ্কিত আর্তনাদ—“বাঁচাও!”

সুমন মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল। কিন্তু বন্ধুকে বিপদে রেখে কি থাকা যায়? এক লাফে সে এগিয়ে গেল। অর্ঘ্যর হাত ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু স্রোত তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। বন্ধুকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে সুমনও তলিয়ে গেল গভীরে।

ঘাটের মানুষ হতবাক হয়ে দেখল ঘটনাটা। বেশিরভাগই নারী, আতঙ্কিত কণ্ঠে চিৎকার করছিলেন, কিন্তু কেউই ঝাঁপ দিতে পারলেন না। একজন মাঝবয়সী লোক শেষমেশ নামলেন, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।

এক ঘণ্টা পর, নৌকার মাঝিরা সুমনকে উদ্ধার করল। নিথর দেহ পড়ে রইল নৌকার তক্তায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক জানালেন—“আর বাঁচানো গেল না!”

অর্ঘ্যর খোঁজ নেই। দাঁইহাটের দেওয়ানগঞ্জের সেই তরুণ পেশায় দলিল লেখক, কিন্তু আজ ভাগীরথীর জলে তার সমস্ত অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ আর বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের লোকেরা ডুবুরিদের নিয়ে খুঁজতে থাকল, কিন্তু নদী যেন তার উত্তর দিতে রাজি নয়।

সন্ধ্যা নামল। নদীর ঘাটে তখনও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে অর্ঘ্যর পরিবার, বন্ধুরা, পাড়ার লোকজন। সবার চোখে একটাই প্রশ্ন—“নদী কি আজ তাকে ফিরিয়ে দেবে?”

কিন্তু নদীর গভীরতা অনেক সময় মানুষের ভাগ্যের চেয়েও রহস্যময় হয়ে ওঠে। কেউ জানে না, সে আজ কি লুকিয়ে রাখল, আর কাকে ফিরিয়ে দিল চিরতরে…

বিঃ দ্রঃ – কাটোয়ার ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন