HomeStory of IndiaWater Turns Into Petrol in Chhattisgarh: কুয়োয় উঠছে পেট্রোল

Water Turns Into Petrol in Chhattisgarh: কুয়োয় উঠছে পেট্রোল

এটি ছিল একটি অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনা

দান্তেওয়াড়ার গিদামের রাতগুলো অন্য দিনের মতোই শান্ত। দিনের কোলাহল শেষে যখন শহর ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে, তখনও পুরনো বাসস্ট্যান্ডের পাশের এলাকায় টিমটিমে বাতির আলোয় অলসতা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু এক রাতে, ভোলু জৈনের বাড়ি থেকে উদ্ভূত একটি খবর পুরো শহরে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে—তার কুয়োর জল নাকি পেট্রলে পরিণত হয়েছে!

প্রথমে খবরটা বিশ্বাস করার মতো ছিল না। ভোলু জৈনের প্রতিবেশী, বেদু তিওয়ারি, যিনি সবসময় কৌতূহলী, এই খবর শুনে নিজের দু’চোখে দেখতে চলে যান। কুয়োর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এক বালতি জল তুললেন, নাকে শুঁকে বললেন, “এটা তো পেট্রল!” ভোলু হেসে উঠলেন, “কেমন করে পেট্রল হবে? এই তো আমাদের পুরনো কুয়ো।” কিন্তু বেদু তখনই জানালার কাছে দাঁড়ানো লণ্ঠনের দিকে বালতিটা নিয়ে গেলেন, একটা দেশলাই জ্বালালেন, আর সেই জল আগুন ধরে জ্বলে উঠল!

এই ঘটনাটা এলাকায় মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ল। লোকজন দল বেঁধে আসতে শুরু করল ভোলুর বাড়ি। কেউ কেউ কৌতূহল মেটানোর জন্য, কেউ আবার বিনামূল্যে পেট্রল পাওয়ার আশায়। বালতি, বোতল, ক্যান নিয়ে লোকজন কুয়ো ঘিরে ভিড় জমাল। এমনকি কিছু মানুষ নিজেদের মোটরবাইকও নিয়ে আসল, পেট্রল ভরার জন্য।

ভোলু হতবাক। তার পুরনো কুয়ো, যেটি একসময় শুকিয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে আজ পেট্রল বের হচ্ছে! তিনি ভাবতেই পারছিলেন না, এটা অলৌকিক কোনো ঘটনা না কি ঈশ্বরের কোনো বিশেষ দান। কিন্তু এই ভিড় আর হইচই কেবল বাড়তেই লাগল।

এদিকে খবর পৌঁছল গিদাম থানার ওসির কাছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই একটা দল নিয়ে এলেন ভোলুর বাড়ি। কুয়োর জল পরীক্ষা করতেই সত্যিটা স্পষ্ট হয়ে গেল। হ্যাঁ, এটা সত্যি পেট্রল। কিন্তু পুলিশ অলৌকিক কিছু ভাবার বদলে পুরো বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করল। ওসির মনে পড়ল, কয়েকদিন আগেই বাফনা পেট্রল পাম্পের মালিক তেল চুরির অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

পুলিশ তদন্ত শুরু করল। তারা পাম্পের চারপাশ খুঁজতে শুরু করল এবং পাম্পের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাঙ্কের দিকে তাদের নজর গেল। দেখা গেল, ট্যাঙ্কের নিচে একটি ছোট ফাটল হয়েছে। সেই ফাটল দিয়ে পেট্রল লিক হয়ে মাটির নিচে চলে যাচ্ছে। ভোলু জৈনের কুয়ো, যা অনেকদিন ধরে শুকনো ছিল, সেটাই পেট্রল লিকেজের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল।

পুলিশ এই খবর জানাতে সঙ্গে সঙ্গেই বাফনা পেট্রল পাম্পের মালিক ঘটনাস্থলে এলেন। তিনি দেখলেন তার ট্যাঙ্ক থেকে পেট্রল বেরিয়ে যাচ্ছে আর সেটা গিয়ে জমা হচ্ছে ভোলুর কুয়োয়। এটি ছিল একটি অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনা।

যদিও মানুষ বিশ্বাস করতে চাইছিল, এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা। এমনকি কিছু লোক কুয়োতে পুজো দেওয়া শুরু করল। তারা ভাবছিল, এটি ঈশ্বরের দান। কিন্তু পুলিশের বিশ্লেষণ ও পাম্পের মালিকের বক্তব্য সত্যিটা সামনে নিয়ে এল।

এরপর পুলিশ কুয়োটি সিল করে দেয়। তারা ঘোষণা করে, এই কুয়োর পেট্রল ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কারণ, এতে মিশে থাকা রাসায়নিক পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।

পেট্রল পাম্পের মালিক দ্রুত লিকেজ ঠিক করার ব্যবস্থা নিলেন। যদিও তার প্রচুর ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল, কারণ অজান্তেই প্রচুর পেট্রল মাটির নিচে গিয়ে জমা হয়েছিল।

ভোলু জৈনের বাড়ি আবার একসময় নিরিবিলি হয়ে উঠল। কিন্তু এই ঘটনাটা স্থানীয়দের মনে গভীর চিহ্ন রেখে গেল। তারা বুঝল, প্রকৃতির উপহারও মাঝে মাঝে কৃত্রিম ঘটনার ফল হতে পারে।

কুয়োর পেট্রল থেকে উৎসাহী মানুষের ভিড়, পেট্রল পাম্পের ক্ষতি, পুলিশের তদন্ত—সব মিলিয়ে ঘটনাটা গিদামের ইতিহাসে এক আশ্চর্য অধ্যায় হয়ে রইল। যদিও ভোলু এখন আর তার কুয়ো নিয়ে মাথা ঘামান না, তবে মাঝে মাঝে কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলেন, “এটা ঈশ্বরের খেলা। তবে পুলিশ যাই বলুক, আমি জানি, আমার কুয়ো বিশেষ ছিল!”

এখন, পুরনো কুয়োটি আবারও মাটির নীচের জলেই ভরে উঠেছে। তবে তার দেয়ালে এখনও পেট্রলের গন্ধ লেগে আছে। সেই গন্ধ যেন ভোলুকে স্মরণ করিয়ে দেয়, কীভাবে রাতারাতি একটি কাকতালীয় ঘটনা তাকে সবার নজরে এনেছিল।

কিন্তু একটাই প্রশ্ন থেকে যায়—যদি পুলিশ সেদিন না আসত, তাহলে কি ভোলু জৈনের কুয়ো পেট্রলের কাহিনী আরও বড় কিছু হয়ে উঠত? কিংবা অন্য কোনো বিপদ ডেকে আনত? উত্তর কেউ জানে না।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন