দুবরাজপুরের যশপুর গ্রামে এক গুরুদেবের আগমন নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা। উজ্জ্বল দাস নামের এই ব্যক্তি নিজেকে আধ্যাত্মিক গুরু বলে দাবি করত। দীক্ষা প্রদান ও আধ্যাত্মিক মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে বহু মানুষকে আকর্ষিত করত।
গ্রামের বাসিন্দা, রতন এবং তার স্ত্রী সরস্বতী, বেশ কিছুদিন ধরেই দাম্পত্য জীবনে মানসিক শান্তি খুঁজছিলেন। তাঁরা শুনেছিলেন উজ্জ্বল দাসের বিশেষ ক্ষমতার কথা। “গুরুজি নাকি মানসিক ও আধ্যাত্মিক শূন্যতা পূরণ করেন!” এমন কথায় তাঁরা গুরুর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথম পর্ব: দীক্ষার আয়োজন
রতন এবং সরস্বতী সকালে গুরুজির তাঁবুতে পৌঁছান। গুরুজি তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। তিনি তাঁদের বলেন, “তোমাদের দাম্পত্য জীবনে সুখ আনতে গেলে দীক্ষা নিতেই হবে।” রতন ও সরস্বতী সম্মতি দেন।
প্রথমে রতনকে আলাদা একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে দীক্ষা দেওয়া হয়। “তোমার আত্মা এখন শুদ্ধ হয়েছে,” গুরুজি বললেন। তারপর সরস্বতীর পালা আসে। সরস্বতী ভীত-সন্ত্রস্ত হলেও আধ্যাত্মিক মুক্তির আশায় গুরুজির নির্দেশ মেনে ঘরে ঢোকেন।
দ্বিতীয় পর্ব: বিশ্বাসের অপব্যবহার
গুরুজি সরস্বতীকে দীক্ষার নামে ভয় দেখিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। ভণ্ডামির মুখোশে এই গুরু সরস্বতীর বিশ্বাস ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে নিজের কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করেন।
তৃতীয় পর্ব: সাহসের শুরু
এই লজ্জাজনক ঘটনার পর সরস্বতী নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে বাড়ি ফিরে পুরো ঘটনা রতনকে জানান। রতন ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
চতুর্থ পর্ব: ন্যায়ের জন্য লড়াই
দুবরাজপুর থানার পুলিশ এক ঘণ্টার মধ্যেই উজ্জ্বল দাসকে গ্রেপ্তার করে। ধরা পড়ার পর উজ্জ্বল তার অপরাধ স্বীকার করে, তবে তার যুক্তি ছিল, “মহিলার সম্মতিতেই এটি হয়েছে।” সরস্বতীর স্পষ্ট বক্তব্য এবং তার প্রতি রতনের অবিচল বিশ্বাস পুলিশের জন্য মামলাটি সহজ করে তোলে।
পঞ্চম পর্ব: সমাজে বার্তা
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে যশপুর পঞ্চায়েত ও আশেপাশের গ্রামগুলিতে আলোচনা শুরু হয়। অনেক মহিলাই সাহস করে ভণ্ড গুরুর বিরুদ্ধে তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সমাজ বুঝতে পারে যে, এই ধরনের “গুরু” শুধুই প্রতারক।
ষষ্ঠ পর্ব: আইন এবং শাস্তি
পুলিশ উজ্জ্বল দাসকে আদালতে পেশ করে এবং চার দিনের পুলিশি হেফাজত পায়। তদন্তে আরও প্রমাণ সংগ্রহ করে মামলাটি শক্তিশালী করা হয়। আদালত দোষী সাব্যস্ত হলে গুরুজিকে দীর্ঘমেয়াদি শাস্তি দেয়।
সচেতনতার বার্তা
এই ঘটনা সমাজে একটি বড় শিক্ষা দেয়। ভণ্ডামির মুখোশ পরে যারা মানুষের বিশ্বাসের অপব্যবহার করে, তাদের চিনে রাখা প্রয়োজন। এই ধরনের ঘটনায় চুপ না থেকে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ করা উচিত। সরস্বতী এবং রতনের মতো সচেতন নাগরিকেরা সমাজে পরিবর্তনের পথে এক বড় উদাহরণ।
উপসংহার
বিশ্বাস একটি পবিত্র জিনিস। কিন্তু সেই বিশ্বাসের অপব্যবহার করতে চাওয়া লোকজন সমাজে সবসময়ই থাকে। এই গল্পটি একটি বার্তা দেয় যে, কুসংস্কার বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়ে কখনোই নিজের মূল্যবান সম্মান বা নিরাপত্তা বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। ভণ্ডদের চিনে তাদের মুখোশ খুলে দেওয়ার সাহসী উদ্যোগ নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।
|| সমাপ্ত ||
________